পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হামিদুল আলম মিলনের স্ত্রী শাহাজাদী আলম লিপি। বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। শুরু থেকেই নানা কারণে আলোচনায় ছিলেন এ প্রার্থী। পুলিশের কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়ায় বিভিন্ন সময় প্রচারণা চলাকালে বড়াই করে বলতেন, একটি জেলার সবগুলো এমপি তার পকেটে থাকে। তাই এমপি পদের লোভে নয়, তিনি রাজনীতিতে আসতে চান জনগণের সেবা করতে।
তার এ বক্তেব্যের ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। নির্বাচনের আগেই ঢাকঢোল পিটিয়ে শত শত গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে প্রচারণা চালান। সেই প্রার্থী তার ঘোষিত হলফনামাতেও নিজেকে ‘ব্যবসায়ী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিপির স্বামী বর্তমানে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে কর্মরত। তথ্য অনুসারে কোটিপতি স্ত্রীর পাশাপাশি তিনিও এখন তিন কোটি ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ৭১৯ টাকা সম্পদের মালিক। এইচএসসি পাস লিপি হলফনামায় পেশা হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। নদীভাঙন সারিয়াকান্দি হাটশেরপুর এলাকার বাসিন্দা লিপির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম ‘মেধা এন্টারপ্রাইজ’।
হলফনামায় আয়ের উৎস হিসেবে কৃষিখাত থেকে বছরে ৫০ হাজার ২০০ টাকা পান বলে উল্লেখ করেছেন লিপি। তার স্বামীর কৃষিখাত থেকে আয় হয় চার লাখ ৫৮ হাজার ২০০ টাকা। লিপি বাড়িভাড়া পান তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। স্বামী পান ছয় লাখ ১ হাজার ২০০ টাকা। আর স্বামীর চাকরি থেকে বছরে আয় হয় ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৭৬০ টাকা। অন্যান্য খাতে স্বামীর কোনো আয় না থাকলেও স্ত্রী লিপি আয় করেন ৫৭ হাজার ৯৬৬ টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে লিপির নগদ টাকা রয়েছে ২৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৫ টাকা। তার স্বামীর কাছে নগদ আছে দুই কোটি ১৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৯ টাকা। লিপির স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা মিলনের ব্যাংকে ৪১ হাজার ৯১৭ টাকা থাকলেও লিপির ব্যাংকে রয়েছে ১২ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৫ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী লিপির চেয়ে তার স্বামীর বেশি অলংকার রয়েছে। লিপির ১০ তোলা অলংকার থাকলেও স্বামী মিলনের রয়েছে ৫০ তোলা। ইলেকট্রনিকস সামগ্রী রয়েছে ৩০ হাজার টাকার। তার স্বামীর রয়েছে এক লাখ ৪ হাজার টাকার। ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে লিপির। তার স্বামীর রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র।
কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, লিপির ২৫৯ দশমিক ৬৯ শতক জমি রয়েছে। যার দাম ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা। তার স্বামীর কৃষিজমি রয়েছে ১২১৪ শতক (১২ একরের বেশি)। এ জমির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র চার লাখ টাকা।
এছাড়া ১০১ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমির মালিক লিপি। যার দাম ২৬ লাখ ১০ হাজার ২৪০ টাকা। তার স্বামী মিলনের ২৫২ দশমিক ৫৩৬ শতক জমি রয়েছে। এরমূল্য এক কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার ২৮০ টাকা।
স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে শাহাজাদী লিপির একটি পাঁচতলা দালান রয়েছে। এটি হেবা সূত্রে (বিনামূল্যে দান সূত্রে পাওয়া) পাওয়া বলে উল্লেখ করেছেন। আছে নির্মাণাধীন আরও একটি বাড়ি। রয়েছে তিনটি দোকান। লিপির স্বামীর রয়েছে একটি পাঁচতলা দালান, একটি আধাপাকা বাড়ি। তবে এগুলো হেবা বা দান সূত্রে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে কোনো মূল্য উল্লেখ করা হয়নি।
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল পাঁচবার। বিএনপিরও পাঁচবার সংসদ সদস্য ছিল। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এসেছিল একবার। এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। যে কারণে আওয়ামী লীগের জন্য এ আসনটি উর্বর এলাকা হিসেবে দেখা হচ্ছে। মনোনয়ন দৌড়ে সে কারণে এ আসনে হেভিওয়েট বেশ কয়েকজন নেতা সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানকেই বেছে নেয় মনোনয়ন বোর্ড। যে কারণে অন্যরা নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে গেলেও লিপি হয়ে যান স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি ছাড়াও বিএনপির সাবেক নেতা শোকরানাসহ ১১ জন দ্বাদশ নির্বাচনে এ আসনে অংশ নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাদী আলম লিপি বলেন, আমি ব্যবসা করি। ব্যবসা থেকে কোটিপতি হয়েছি। আর এলাকায় বেশ আগে থেকেই প্রচারণা চালাই, এই তথ্যটিও সত্য। তবে এলাকার মানুষ ভালোবেসে এসব প্রচারণার টাকা খরচ করে। আমাদের কোনো টাকা খরচ করতে হয় না।।