বিএনপির ভুয়া আন্দোলনে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চোরাগোপ্তা হামলার জন্য এখন তারা কর্মী পাচ্ছে না। তারা এখন ভাড়া করা টোকাই দিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে।
আজ রোববার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা সন্ত্রাস, অগ্নি সন্ত্রাস, হিংসা, চোরাগোপ্তা হামলা, নাশকতা, স্বাভাবিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে তারা রাজনীতিটাকে সন্ত্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন গাড়ি পোড়াচ্ছে। বিআরটিসি চেয়াম্যান আমাকে জানাল, ১৭টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। বেসরকারি অনেক গাড়ি; ২৭৫টির মতো হিসাব আমরা পেয়েছি। গাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে, ভাঙচুর করা হয়েছে। তারা ২০১৪-১৫ সালে যে অপকর্মটি করেছে, পার্ক (পার্কিং) করা গাড়ি হেলপার শুয়ে আছে, ড্রাইভার শুয়ে আছে। পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। গাড়িও পুড়ে গেছে, ড্রাইভার-হেলপারও পুড়ে গেছে। ঠিক একই ঘটনা বাস-হেলপার বেলাল হোসেনের বেলায় ঘটেছে। এটা খাগড়াছড়ির ঘটনা।’
তিনি বলেন, ‘এখন তাদের গণবিরোধী রাজনীতি সমর্থন না দিলে তারা জনগণকে শত্রু ভাবে। বেলাল হোসেনের একটা নিরীহ বাস-হেলপার…তার ৮০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাদের নির্মম শিকার।’
নির্বাচন এলেই কিছু মানুষ ও গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জনসমর্থনহীন এসব গোষ্ঠী নির্বাচনে হেরে যাবে—এ আশঙ্কায় সব সময় পেছনের দরজা খোলা রাখে। পেছনের দরজা দিয়ে তারা ক্ষমতায় আসার ষড়যন্ত্র করে। বাংলাদেশে এখন সেটাই চলছে।’
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘এখন তারা অবরোধ ডাকছে, হরতাল ডাকছে। লন্ডনে বসে নির্দেশ দিচ্ছে, ফরমায়েশ দিচ্ছে দেশের ক্ষতি করার জন্য। রাজনৈতিক আন্দোলন তাদের ব্যর্থ। সে কারণে তারা নির্বাচনের রাজনীতিতে আসতে ভয় পায়। তারা নির্বাচনে আসতে ভয় এবং নির্বাচন যাতে না হতে পারে তার জন্য ষড়যন্ত্র করে।
‘আজকে বিএনপির এক নেতা; অন্যদের তো খবর নেই, প্রকাশ্যে আসে না। এক নেতা হঠাৎ হঠাৎ কোত্থেকে বের হয়। হঠাৎ হঠাৎ সকালে কুয়াশার মধ্যে একজন লোক, পেছনে ১০-১২ জন আছে ঝটিকা মিছিল করে। এটা কি আন্দোলন? এতে কি জনগণের সমর্থন আছে? আবার চোরাগোপ্তা হামলার জন্য এখন তারা কর্মী পাচ্ছে না। তারা এখন ভাড়া করা টোকাই দিয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। পয়সা দিলে পাওয়া যায়। ধরে ধরে এনে তারা এদেরকে দিয়ে বোমা হামলা, পেট্রল বোমা, ককটেল—এসব অপকর্মে তারা লিপ্ত হয়েছে,’ বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘তাদের অনেকেই এই নেতিবাচক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। তার প্রমাণ, তাদের দলের অনেক নেতা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে এবং তাদের রাজনীতি দ্বারা আমরা যাদের এতদিন দেখেছি শুধু শমসের মবিন-তৈমুর আলম খন্দকার নন; জেনারেল (অব.) ইবরাহিম বীরপ্রতীক, তিনিও তাদের ধ্যান-ধারণার ছিলেন। অনেকেরই আজকে শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। অনেকেই বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতিতে জড়িয়ে নিজেদের রাজনৈতিক জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায় না। কাজেই স্বাভাবিক এবং সুস্থ রাজনীতির ধারায় ফিরে আসতে তারা শুরু করেছে।
‘আমরা বিশ্বাস করি, সামনের দিনগুলোতে বিএনপির আরও অনেক নেতা এবং কর্মী এই অসুস্থতার আবর্ত থেকে বেরিয়ে এসে সুস্থ ধারার রাজনীতিতে ফিরে আসবে,’ যোগ করেন তিনি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিশেষজ্ঞ টিম গতকাল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে। সেখানে বিএনপি অভিযোগ করেছে, গায়েবি মামলার মাধ্যমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার এবং সম্ভাব্য প্রার্থীসহ শত শত নেতাকর্মীদের সাজা দেওয়ার মতো দমন-নিপীড়নের মধ্য দিয়ে একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে সরকার—এ ব্যাপারে মত জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘মোট ২৮টি নিবন্ধিত দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। বিএনপি তো একটা দল! এখন ৩২ দফা, ৫৪ দল। তারাও তাদের সঙ্গে নেই। অনেকেই তাদের ভুলের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। আর বিএনপি না এলে নির্বাচন অশুদ্ধ হয়ে যাবে, একতরফা হয়ে যাবে, কেন? এই ২৮টি দল কি বিভিন্ন তরফের না? তারা কি সবাই আওয়ামী লীগ করে? স্বতন্ত্রপ্রার্থী সবাই কি আওয়ামী লীগ করে?
‘এদের মধ্যে বিএনপির যে ভুয়া আন্দোলন, এ আন্দোলনে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছিল। আজকে তাদের ঝটিকা মিছিল করতে হয় অন্ধকারে। এদের বুকে সাহস নেই। আমি তারেক রহমানকে বলবো, এটা রাজনীতি নয়। রাজনীতি করতে চান, সৎ সাহস থাকলে আসুন, রাজপথে মোকাবিলা হবে। আমরা একটা রাজনৈতিক দল, আপনারা আমাদের প্রতিপক্ষ। কিন্তু আপনাদের আমরা শত্রু কখনো ভাবিনি। ষড়যন্ত্র করিনি, বেগম জিয়াকে হত্যা করতে যাইনি, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করতে যাইনি,’ বলেন কাদের।
হত্যার রাজনীতি, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।