মহাস্থান নিউজ:
সার্বিকভাবে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করাই একমাত্র লক্ষ্য, এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সে লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২২ হাজার ১০১টি ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এর মধ্যে দিয়ে আরও ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘যাদের জীবনে কোনো আশা ছিল না, ভবিষ্যত ছিল না, একটি ঘর তাদের জীবনটাই পাল্টে দিয়েছে। কৃতজ্ঞতা এ দেশের মানুষের প্রতি যে, আপনারা আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।
সরকারের দেওয়া ঘরের যত্ন নিতে এবং সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে নিজেদের জীবনমান উন্নয়নের আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, নিজেরা ধীরে ধীরে আরও সক্ষম হবেন, জীবন-জীবিকার উন্নয়ন হবে। দেশে একটি মানুষও অবহেলিত থাকবে না। এটা জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা ছিল। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি।
এ সময় বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সন্ত্রাস, বোমা-গুলি, আগুনসন্ত্রাস ছাড়া কিছু বোঝে না। মানুষের জন্য তাদের কোনো চিন্তা নেই। ক্ষমতায় থেকে লুটপাট, অস্ত্র চোরাকারাবারি, এতিমের অর্থ লুটপাট; তারা এটাই করে। এখনও তারা এটা করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষকে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলা করে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। এ দেশে হতদরিদ্র থাকবে না। হতদরিদ্রের হার ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আস্থা-বিশ্বাস রাখবেন। একটানা ক্ষমতায় আছি বলেই সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। নৌকা স্বাধীনতা দিয়েছে, এখন নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই গৃহহীন মানুষ ঘর পেলেন।
আজ ঘর উপহার দেওয়ার মাধ্যমে ৪১টি জেলার আরও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হলো। এর ফলে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ালো ৩৩৪টিতে এবং সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলা হলো ২১টি।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি পরিবার ভূমিসহ স্থায়ী ঘর পেলো, যাদের থাকার জন্য নিজেদের কোনো জায়গা ছিল না।
২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, ২০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি এবং মুজিববর্ষে তৃতীয় পর্যায়ে দুই ধাপে মোট ৫৯ হাজার ১৩৩টি ঘর বিতরণ করা হয়েছে। এবার ২২ হাজার ১০১টি ঘর দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে বিতরণ করা মোট ঘরের সংখ্যা হবে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে ২২ হাজার ১০১টি বাড়ি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আরও ১২টি জেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। ৪১টি জেলার আরও ১২৩টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হলো। এর ফলে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত মোট উপজেলার সংখ্যা হলো ৩৩৪টি। এই ১২টি জেলাসহ সম্পূর্ণ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলার সংখ্যা দাঁড়ালো ২১টিতে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প বিশ্বে অনন্য প্রকল্প। কারণ, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বিপুল সংখ্যক ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাড়ি বিতরণ করা হয়নি।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপের এটি দ্বিতীয় পর্যায়। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের অধীনে প্রথম দফায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লি আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাগ্রহীতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন।
তিনি মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ, শেরপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, পিরোজপুর ও ঝালকাঠিকে গৃহহীন-ভূমিহীন মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। এর আগে পঞ্চগড় ও মাগুরাসহ নয়টি জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়ি ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৮ লাখ ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। পুনর্বাসিত মানুষের সংখ্যা ৪১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫ জন (একটি পরিবারে পাঁচ সদস্য ধরে)।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প ইতোমধ্যে ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ পরিবারকে সরাসরি পুনর্বাসন করেছে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির অধীনে পুনর্বাসন করা হয়েছে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯০ পরিবারকে।