মহাস্থান নিউজ:
ভূমি নিয়ে প্রতারণায় সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, খসড়া আইনে ভূমির কয়েকটি অপরাধকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকারি এবং সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও দমনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আইনে ভূমি সম্পর্কিত বিরোধ আদালতের বাইরে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
নতুন খসড়া আইনে শাস্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, অন্যের মালিকানাধীন ভূমি নিজের মালিকানাধীন ভূমি হিসেবে প্রকাশ করা, কোনো ভূমি সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্য গোপন করে তা অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, নিজ মালিকানাধীন ভূমির অতিরিক্ত ভূমি বা অন্যের মালিকানাধীন ভূমি জেনেশুনে অন্য ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর বা সমর্পণ, কোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তি বলে ভান করে বা জ্ঞাতসারে এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তিরূপে প্রতিস্থাপিত করে কিংবা কোনো ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে যে ব্যক্তি সেই ব্যক্তি থেকে ভিন্ন কোনো ব্যক্তি বলে পরিচয় দিয়ে সম্পত্তি হস্তান্তর বা সমর্পণ—এসব কাজ করলে সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
জালিয়াতি-সংক্রান্ত বিষয়ে বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা অনিষ্টসাধন করার বা অন্য কোনো দাবি বা অধিকার সমর্থন করার বা অন্য কোনো ব্যক্তিকে কোনো সম্পত্তি পরিত্যাগ করতে বা চুক্তি সম্পাদন করতে বাধ্য করার ইচ্ছায় কিংবা প্রতারণা করা যেতে পারে এরকম মিথ্যা দলিল বা কোনো মিথ্যা দলিলের অংশবিশেষ প্রস্তুতকরণ, কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া অসাধু বা প্রতারণামূলকভাবে কর্তন করে বা অন্য কোনোভাবে তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবর্তন করা ইত্যাদির জন্য সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড হতে পারে। এসব অপরাধে সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
ভূমি অবৈধ দখল করলে সেটা দুই বছর, সরকারি স্বার্থযুক্ত এবং জনসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি অবৈধভাবে ভরাট, শ্রেণি পরিবর্তন ইত্যাদি করলে দুই বছর কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান আইনে রাখা হয়েছে।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, আইনানুগ কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করে কোনো আইন প্রয়োগে বাধা দিলে সেখানে দুই বছর, অপরাধ সংগঠন বা সহায়তা করা বা প্ররোচনা করলে, তাহলে একই পরিমাণ সাজা তারা পাবেন।
‘কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৩’-এর অনুমোদন
গতকালের সভায় ‘কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২৩’ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে বলেন, এটি এ জাতীয় প্রথম কোনো নীতিমালা। এর আওতায় কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প উত্পাদনে সরকারের তরফ থেকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ খাতে যেসব প্রণোদনা ও সহযোগিতা করা হবে, তার একটি প্রস্তাবনা বা নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। সভায় প্রস্তাবটি তুলেছিল শিল্প মন্ত্রণালয়।
বালু পরিবহনে রাস্তার ক্ষতি, দিতে হবে ক্ষতিপূরণ
বালু পরিবহনের কারণে রাস্তা বা স্থাপনার ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারকে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার বিধান রেখে ?‘বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন, ২০২৩’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিন ফসলি জমি ও টপ সয়েল নষ্ট হতে পারে—এমন সম্ভাবনা থাকলে বালু তোলা যাবে না। আগে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে যাওয়ার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা যন্ত্রপাতি জব্দ করতে পারতেন না। এখন নতুন আইনে সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনের ইজারা কার্যক্রম অনলাইনে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বালু পরিবহনের কারণে রাস্তার বা স্থাপনার ক্ষতি হলে সেটি ইজারাদারকে পরিশোধ করতে হবে।