বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে গ্রাহক পর্যায়েও বাড়বে বিদ্যুতের দাম।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন হতে পারে।
এর আগে সকালে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৩৪ থেকে ৭০ পয়সা বাড়তে পারে। মার্চ থেকেই নতুন দর কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের লাইফলাইন গ্রাহক (০ থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহক) আছে ১ কোটি ৪০ লাখ। তাদের বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা, আর উপরের দিকে এই দাম ৭ টাকা। কিন্তু উৎপাদন খরচ ১২ টাকা। এতে সরকারকে একটা বড় অংশ এই খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এই ভর্তুকির আরও বাড়ছে কারণ ডলারের দাম বাড়ছে। এই পার্থক্যটা হঠাৎ বড় রকমের লাফ দিয়েছে গত বছর থেকে। আমরা এখন থেকে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাচ্ছি। যা আগামী তিন বছরে মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। তবে এটি যাতে সহনীয় পর্যায়ে হয়, সে বিষয়টি আমরা দেখছি।
তিনি বলেন, কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র করার সময় মার্কিন ডলারের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা ধরে হিসাব করা হয়েছিল। এখন ডলারের দাম ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। জ্বালানি খরচের ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্বেই দাম সমন্বয় করা হয়।
বিদ্যুতে ভর্তুকির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই বছর আমাদের বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা, আর জ্বালানির ক্ষেত্রে ৬ হাজার কোটি টাকা। এগুলো আমরা কয়েক বছরে ধীরে ধীরে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। আমরা এরইমধ্যে কুইক রেন্টাল থেকে বেরিয়ে এসেছি, ডিজেল থেকে বেরিয়ে এসেছি। এখন আমাদের বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো (কয়লাভিত্তিক) চলে এসেছে। আগামী বছর থেকে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র চলে আসবে (চালু হবে)। ভারত থেকে আমরা কম রেটে বিদ্যুৎ পাচ্ছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে ২ হাজার মেগাওয়াট সোলার থেকে বিদ্যুৎ পাব আমরা। তারপরও যে ভর্তুকিটা রয়ে যাবে, তা ডলার রেটের কারণে। এ কারণে আমাদের প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহ্নত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জ্বালানি বিভাগের উপসচিব শেখ মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- সরকারি, আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জন্য নতুন দাম হবে ঘনমিটার প্রতি ১৪ দশমিক ৭৫ টাকা। অন্যদিকে শিল্পের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঘনমিটার প্রতি দাম হবে ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা।
সর্বশেষ গত বছরের জানুয়ারিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৫ টাকা ৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৪ টাকা এবং ক্যাপটিভ ১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছিল। তখন শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। তবে পরিবহন খাতে ব্যবহৃত সিএনজি ও আবাসিকের গ্যাসের দাম বাড়ায়নি সরকার।