অ্যাপেন্ডিকস মূলত বৃহদন্ত্রসংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র সরু নালি। মল, ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া জীবাণু দ্বারা সংক্রমণ, কেঁচোকৃমি ইত্যাদি বহু কারণে এই সরু নালিপথ বন্ধ হয়ে গেলে তাতে প্রদাহ ঘটে। ফুলে-ফেঁপে যায় এবং এতে পচন ধরে। কখনোবা নালির অগ্রভাগে ফুটো দেখা দেয়, যে কারণে সারা পেটে বা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে।লক্ষণ
♦ অ্যাপেন্ডিসাইটিস দেখা দেওয়ার কোন পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসা হয়েছে, তার ওপর রোগের লক্ষণ নির্ভর করে। তবে যে ত্রয়ীর সংযোগ ঘটলে এ রোগের কথা প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, তা হলো—ব্যথা, বমি, জ্বর♦ প্রথমদিকে এই ব্যথা নাভির চারপাশে দেখা যায়। ব্যথা হওয়ার পর দু-একবার বমি হতে পারে। খিদে থাকে না। ফুটো হয়ে সারা পেটে প্রদাহ ছড়িয়ে না পড়লে জ্বরের মাত্রা সাধারণত কম থাকে। কখনো ডায়রিয়া বা প্রস্রাবের অসুবিধা দেখা দিতে পারে।♦ প্রদাহ ছড়িয়ে পড়ার কারণে পেটে ব্যথা, যা নাভির চারপাশে প্রথম দিকে অনুভূত হতো, তা পরে পেটের ডান পার্শ্বে নিচের দিকে অনুভব করা যায়। সাধারণভাবে অসুখের লক্ষণ শুরুর ৩৬-৪৮ ঘণ্টা পরে অ্যাপেন্ডিকসে ফুটো দেখা দেয় এবং ৪৮ ঘণ্টার পরে রোগ নির্ণয় করা হলে প্রায় ৬৫ শতাংশ শিশুরোগী এই জটিলতা নিয়েই হাজির হয়।
রোগ নির্ণয়রোগের ইতিহাস নিয়ে ও শিশুকে যথাযথভাবে পরীক্ষা করে অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি না, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। এর সঙ্গে অন্য যেসব কারণে সচরাচর শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে, তা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা করানো যেতে পারে।চিকিৎসা
রোগের ইতিহাস নিয়ে, শিশুকে পরীক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় কিছু ল্যাবরেটরি টেস্টের পর এসব উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীকে তিন শ্রেণিতে মূল্যায়ন করা যেতে পারে—
♦ শিশু অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত, তা সুনিশ্চিত অথবা তা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
♦ অ্যাপেন্ডিসাইটিস ভিন্ন অন্য কোনো অসুখ।
♦ রোগ নির্ণয় নির্দিষ্ট হয়নি।
♦ প্রথমোক্ত শ্রেণির চিকিৎসা হচ্ছে সার্জারির সাহায্যে অ্যাপেন্ডিকস কেটে ফেলে দেওয়া। যেসব ক্ষেত্রে চিকিৎসক রোগ নির্ণয় বা নির্দিষ্ট করতে পারেননি, সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনে অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হয়। সর্বোপরি ওই শিশুকে পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে।♦ অ্যাপেন্ডিকসে ফুটো দেখা দেওয়ার আগে অপারেশনের সাহায্যে অসুখের জটিলতা যেমন কমানো যায়, তেমনি শিশু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে, হাসপাতালে বেশি দিন থাকতে হয় না শিশুকে। অসুখ শুরুর ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে অ্যাপেন্ডিসাইটিস এসব জটিলতা নিয়ে প্রকাশ পায়। সে জন্য এসব উপসর্গ নিয়ে কোনো শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সত্বর বিশেষজ্ঞ শিশু-সার্জন দেখানো উচিত।