রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহীতে তিন দিনের অভিযানে মজুদ করা প্রায় এক লাখ ৬৩ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলায় এক লাখ ৪০ হাজার এবং নগরীতে ২৩ হাজার লিটার। দুর্বল বাজার তদারকির সুযোগেই ব্যবসায়ীরা এই বিপুল পরিমাণ তেল মজুত করার সুযোগ পেয়েছিলেন বলে ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
এদিকে এসব তেল টিসিবির মাধ্যমে ১১০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হবে। এরইমধ্যে তেলগুলো টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির অনুমতির জন্য রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ আবেদনও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম। আজ শুক্রবার তিনি বলেন, গত ৯ মে জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরে দুটি গুদামে অভিযান চালিয়ে ২৬ হাজার ৭২৪ লিটার খোলা সয়াবিন জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলাম স্বপনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বাগমারা থানার পুলিশ পরিদর্শক রিপন সরকার (মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা) গত ১০মে রাজশাহীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ একটি আবেদন করেন জব্দকৃত তেলগুলো টিসিবির মাধ্যমে বিক্রির অনুমতির জন্য।
পরদিন (১১মে) পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের ৪টি গুদাম থেকে আরেকটি অভিযানে মোট ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার পামওয়েল ও খোলা সয়াবিন জব্দ করা হয়। ওই দিনই দিবাগত রাতে পুঠিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনের মাধ্যমে আদালতে আবেদন করা হয়। এখন অনুমতি পেলেই তেলগুলো টিসিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং তেলগুলো টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হবে। বর্তমানে জব্দকৃত তেলগুলো জেলা পুলিশের হেফাজতেই রয়েছে বলে জানান জেলা মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম।
রাজশাহী জেলা পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বেশি মুনাফার লোভে রোজার আগে থেকে এসব ব্যবসায়ীরা তেল মজুত করে রেখেছিলেন। রাজশাহীর বাজারে কৃত্রিম ভোজ্যতেল সংকটের জন্য এরাই দায়ী। তারা তেলের ব্যবসার বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই সব তেল জব্দ করা হয়েছে এবং অবৈধভাবে ভোজ্যতেল মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির দায়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বানেশ্বর বাজারের পাঁচ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- বানেশ্বর বাজারের সরকার অ্যান্ড সন্সের সত্ত্বাধিকারী শ্রী বিকাশ সরকার ওরফে গোলাপ (৫৮), এন্তাজ স্টোরের মালিক এমদাদুল হক (৪০), মেসার্স পাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক শৈলেন কুমার পাল (৬৫), রিমা স্টোরের মালিক রাজিব সাহা (৩৭) ও ট্রাক ড্রাইভার লিটন (২৫)।
এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া ৫ জনকে গত বুধবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। দেশের স্থিতিশীলতা ভঙ্গ ও জনবিরোধী এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতে খায়ের আলম।
এদিকে রাজশাহীতে তিন দিনের অভিযানে করা বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল মজুদের কারণ হিসেবে দুর্বল বাজার তদারকিকেই দায়ী করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয় বাজার তদারকির কাজটি করে থাকে। এই কার্যালয়ে একজন জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (মার্কেটিং অফিসার), একজন পরিদর্শক, একজন মাঠ কর্মকর্তা, একজন সহকারী মাঠ কর্মকর্তা ও একজন অফিস সহকারী রয়েছেন। তবে অফিস সহকারীর পদটি এখন শূন্য।
রাজশাহী জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (মার্কেটিং অফিসার) মনোয়ার হোসেন জানান, তারা উপজেলাগুলোতে সব সময় অভিযানে যেতে পারেন না। একটি কার্যালয় থেকে নয়টি উপজেলায় অভিযানে যাওয়া সম্ভব হয় না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) কোনো অভিযানে ডাকলে তিনি যান। তবে তাদের পরিদর্শক সপ্তাহে একদিন করে একটি বাজারের ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য যান।
পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার দেশের উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র। এখান থেকে পাশের জেলা ও রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে তেল সরবরাহ করা হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে বানেশ্বর বাজারের চারটি গুদাম ও একটি ট্রাক থেকে ৯২ হাজার ৬১৬ লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়।
এর মধ্যে ২৪ হাজার ৬৮৪ লিটার সয়াবিন ও ৬৭ হাজার ৯৩২ লিটার পাম তেল পাওয়া যায়। এই দিনে গোদাগাড়ীর বিদিরপুর থেকে ২০ হাজার লিটার এবং আগের দিন বাগমারার তাহেরপুর বাজার থেকে ২৭ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়। এছাড়াও গত বুধবার নগরের একটি গুদামে পাওয়া যায় ২৩ হাজার লিটার ভোজ্য তেল।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ জানান, নিয়ম অনুযায়ী পাইকারি বিক্রেতারা সর্বোচ্চ ৩০ মেট্রিক টন তেল সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত মজুত রাখতে পারবেন। তবে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম জানান, মজুত রাখতে হলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একটি লাইসেন্স থাকতে হয়। বানেশ্বর, তাহেরপুর ও গোদাগাড়ীর এই ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে সেই লাইসেন্স দেখাতে পারেননি।
রাজশাহী পুঠিয়ায় কত দিন আগে অভিযানে গেছেন- জানতে চাইলে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, গত ৯ এপ্রিল ইউএনও অভিযান চালালে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। এরপর আর যাওয়া হয়নি। আর সবর্শেষ দেড় বছর আগে বাগমারা উপজেলায় অভিযানে গিয়েছিলাম। অচিরেই প্রতিটি উপজেলায় তাদের কার্যালয় করা হবে বলে জানান তিনি।