যমুনা নিউজ বিডিঃ বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক বিস্ময়কর প্রতিভা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বাংলা সাহিত্যকে তিনি বিশ্বপরিমণ্ডলে তুলে ধরেছেন। রোববার (৮ মে) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে এমন কথা বলেন তিনি। ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক বিস্ময়কর প্রতিভা। বাংলা সাহিত্যকে তিনি তুলে ধরেছেন বিশ্বপরিমণ্ডলে। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিনাট্যকার, প্রবন্ধকার। সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি বিচরণ করেননি। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তিনি মানবতার জয়গান করেছেন। মনুষ্যত্বের বিকাশ ও মানবমুক্তি ছিল তার জীবনবোধের প্রধানতম দিক। শুধু সাহিত্যসাধনা নয়, পূর্ববঙ্গের জমিদারি পরিচালনার পাশাপাশি দরিদ্র প্রজাসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানবিক বিকাশের জন্য তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এসব প্রয়াসের মধ্যে তাঁর মানবহিতৈষী মন ও জনকল্যাণ চেতনার গভীর পরিচয় মেলে। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ বহুমুখী অবদান রেখে গেছেন। পূর্ববঙ্গের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের স্থাপিত হয়েছিল গভীর সম্পর্ক। এখনকার দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে তাঁর মাঝে মানবসমাজ সম্পর্কে নতুন উপলব্ধি জন্মেছিল। এ উপলব্ধি তাঁর সাহিত্যে গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। এজন্য পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। লালন ফকিরের গান তাঁকে পরিণত করেছে রবীন্দ্রবাউলে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা, উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং ধর্ম-বর্ণ-বিত্ত-লিঙ্গ নির্বিশেষে সর্বমানবের মুক্তির চেতনা রবীন্দ্রনাথকে অনন্য উচ্চতা দান করেছে।
রবীন্দ্রনাথ বাঙালির অমৃত সন্তান। তাঁর গান বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন আমাদের প্রেরণাশক্তি। তাঁর গান, সাহিত্য ও কর্মচেতনা বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। পাকিস্তানবাদী সংস্কৃতির বিপরীতে রবীন্দ্রসাহিত্য ছিল আমাদের প্রধান অবলম্বন। রবীন্দ্রনাথ শেষজীবনে ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধে প্রাচ্যদেশ থেকে এক মহামানবের আগমন প্রত্যাশা করেছিলেন, যিনি সমস্ত সংকট-সমস্যায় হবেন কাণ্ডারি। তিনি আর কেউ নন-স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যে মহান ভাবাদর্শে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ভাবনা ছিল অন্যতম। বঙ্গবন্ধু এ জন্যই রবীন্দ্রনাথের গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে এবং জাতি হিসেবে সার্বিক মুক্তিচেতনায় তিনি আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন। বিশ্বব্যাপী করোনার কারণে গত দুই বছর রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা সম্ভব হয়নি। এবার সাড়ম্বরে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপিত হচ্ছে। ‘চির নূতনেরে দিল ডাক/পঁচিশে বৈশাখ’ বাঙালির অন্তরকে ছুঁয়ে যাক- এ আমার উদাত্ত আহ্বান। আমি ‘১৬১তম রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালার সার্বিক সাফল্য কামনা করি।