যমুনা নিউজ বিডিঃ আজ শনিবার (৭ মে) স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।
এ উপলক্ষে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ফাউন্ডেশন ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি স্মৃতি পরিষদ ঢাকা ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, খাবার বিতরণ, শোক সভা এবং তার জীবন ও কর্মের ওপর প্রকাশনা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খাঁটি সৈনিক আহসানউল্লাহ মাস্টারের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে একজন শ্রমিক নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা হিসেবে বিভিন্ন সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও রাজনীতিতে শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টারের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
তিনি আহসানউল্লাহকে গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন এবং মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে কখনোই পিছপা হননি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের মতো ত্যাগী ও মানবিক নেতৃত্বে মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়সহ গণতন্ত্রের বিকাশে নতুন প্রজন্মকে আলোর পথ দেখাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, আজীবন মানবসেবায় নিবেদিতপ্রাণ আহসানউল্লাহ মাস্টার শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯২ সালে উপজেলা পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি সমিতির আহ্বায়ক হিসেবে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের পক্ষে মামলা করেন এবং দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে তাকে গ্রেপ্তার করে কারারুদ্ধ করা হয়।
তিনি বলেন, আহসান উল্লাহ মাস্টারের স্বপ্ন ছিল মাদক-সন্ত্রাসমুক্ত টঙ্গী-গাজীপুর গড়ার, কিন্তু তৎকালীন হাওয়া ভবনের ডিজাইন করা জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নিশ্চিহ্ন করার বিএনপি-জামায়াত সরকারের নীলনকশা ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছে।
ওমর ফারুক রতনের মতো তার কিছু ছাত্রকেও তাদের প্রিয় শিক্ষক আহসানুল্লাহ মাস্টারকে বাঁচাতে শাহাদাতের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বলে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন।
‘শুধু তাই নয়, আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যার পর মহাজোট সরকারের পুলিশ আন্দোলন কর্মসূচি ও প্রতিবাদী জনতার ওপর গুলি চালিয়ে আরও দুই নিরীহ মানুষকে হত্যা করে এবং আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।’ শেখ হাসিনা তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল সকালে গাজীপুর সিটি করোপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের হায়দ্রাবাদ গ্রামে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিকালে খাবার বিতরণ, মিলাদ ও দোয়া-মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়াও এ উপলক্ষে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অ্যাডভোকেট আব্দুল বাতেনের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর মশিউর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ হাওলাদার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন সাংবাদিক আতাউর রহমান।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগের গাজীপুর মহানগর শাখা, গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন, ভাওয়াল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদ, ভাওয়াল আইডিয়াল একাডেমি, হায়দ্রাবাদ জনকল্যাণ সমিতি ও ভাওয়াল শিশু কিশোর ফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভা, মিলাদ ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করেছে।
উল্লেখ্য, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার গাজীপুর-২ আসন (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) থেকে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুইবার সংসদ সদস্য, ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৮ সালে দুবার পূবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) চেয়ারম্যানও ছিলেন।
২০০৪ সালের ৭ মে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় একদল সন্ত্রাসী তাকে গুলি করে হত্যা করে।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের বড় ছেলে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল স্বাস্থ্যবিধি মেনে আহসান উল্লাহ মাস্টারের শাহাদাতবার্ষিকী অনুষ্ঠান পালনের জন্য হায়দ্রাবাদ, টঙ্গী ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিক লীগসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে তার প্রয়াত পিতার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।