আবুহুমাইর হোছেন বাপ্পিঃ চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোঃ রাশেদ খান হত্যা মামলায় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে রায় প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল সোমবার ৩১ জানুয়ারি বিকেলে ৩০০ পৃষ্ঠার এ রায় দেন। রায় ঘোষনা করা মামলার নম্বর এসটি : ৪৯৩/২০২১ ইংরেজি।
এছাড়া আসামী কনস্টেবল সাগর দেব, রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন আয়াজ উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
বাকী ৭ জন আসামীকে
মামলার দায় থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
তারা হলো-কনস্টেবল সাফানুর করিম, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব, কামাল হোসেন আজাদ ও মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।
মামলায় ৬ আসামীকে যাবজ্জীবন সাজা ও ২ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়েছে। রায়ে সাজাপ্রাপ্ত ৮ জন আসামীকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডও প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল বেলা ২ টা ২৫ মিনিটে এলজাসে উঠে রায় ঘোষনা করা শুরু করে দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা রায় পাঠ করেন। রায়ে তিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের কৃত অপরাধ অনুযায়ী সাজা দেওয়া হয়।
আলোচিত এই মামলার ১৫ জন আসামীকেও সোমবার কঠোর নিরাপত্তায় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এসময় আদালতে ১৫ আসামি উপস্থিত ছিলেন।
রায় ঘোষনার সময় বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস, রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী, বাদী পক্ষের আইনজীবী ও আসামী পক্ষের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার কক্সবাজার আদালত এলাকায়ও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসামীদের স্বজনেরাও রায় শুনতে আদালত এলাকায় এসেছিলেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর মারিশবনিয়া এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নির্মমভাবে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় নিহত মেজর (অব:) সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামী করে কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এর আদালতে ৯ জনের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষী সহ আলোচিত মামলাটির চার্জসীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন, র্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২১ সালের ২৩ আগস্ট কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
১৫ জন আসামীর মধ্যে ১২ জন আসামী ১৬৪ ধারায় আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। ৩ জন আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেননি।
এ মামলায় ৬৫ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।