বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল হাজারীকে নিয়ে কবি,গীতিকার ও সুরকার ফেনির কৃতিসন্তান নজরুল বাঙালীর আবেগঘন ফেসবুক স্টাটাস
স্মৃতিতে অম্লান জয়নাল হাজারী
নজরুল বাঙালি।
সালটা ১৯৮০ সবে মাত্র এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে ভাবছি কোন কলেজে ভর্তি হই, বাবার ইচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কলেজে ভর্তি হই। কিন্তু আমার ইচ্ছা ফেনী সরকারি কলেজে, সেখানে রাজনীতিতে ফেনীর আওয়ামী রাজনীতির কিংবদন্তি নেতা জননেতা জয়নাল হাজারীর সান্নিধ্য পাবো। তাই মা কে বুঝানো হলো আমাকে যেন ফেনী কলেজে ভর্তি করানো হয়। মা বাবা কে বলে দিলো নজরুল কে ফেনী কলেজে ভর্তি করা হবে মায়ের সিদ্ধান্তের ওপর বাবা আর কিছু কললে না।তবুও বাবা মা কে বুঝানোর চেষ্টা করলে যে ফেনী কলেজে পড়া লিখা হয় না সেখানে জাসদ, বি এন পি, আওয়ামীলীগ সব সময় মারামারি করে। যদিও বাবা কিছুটা সত্যি বলেছেন তুবুও মায়ের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী আমি ফেনী কলেজে ভর্তি হই। সেই সময়টিতে ফেনী কলেজ ৫টি ছাত্র সংগঠনে খুব দাপট ছিল এরা হলেন আওয়ামী ছাত্রলীগ,জাসদ ছাত্রলীগ, বাসাদ ছাত্রলীগ ও কাজী জাপরের ইউ পি পি ছাত্র ইউনিয়ন। যদিও ফেনী কলেজে পাঁচ টি ছাত্র সংগঠনের পদচারণা ছিলো কিন্তু ভৌগোলিক কারণে নিয়ন্ত্রণ ছিলো আওয়ামী ছাত্রলীগ এর দখলে। জাসদ ছাত্রলীগ এই নিয়ন্ত্রণ মেনে নিতো না তাই প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু নিয়ে দুই ছাত্র সংগঠন ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকতো। কলেজ পুকুরের দক্ষিণ পাশে কলেজ হোষ্টেল অবস্থান ছিল জাসদ, বাসদ, ইউ পি পি, আর পূর্ব পাশে কলেজ হোষ্টেলে আওয়ামী ছাত্রলীগ ও বি এন সি সি নামক একটি অজরানৈতিক সংগঠন। তখনো ছাত্র সংগঠন গুলোতে মারামারি হতো তবে কোন অগ্নিয় অস্ত্র ছিলো না অস্ত্র বলতে ছিলো বাঁশে লাঠি বড়জোর লন্বা দাও ও কিরিজ তবে রক্তাক্ত ফেনী কলেজ কখনো দেখনি। যাক বলতে চেয়েছিলাম ফেনীর ৮০ দশকের রাজনীতি ও নেতৃত্বের কথা। আমার প্রথম রাজনীতির হাতে কড়ি শুরু হয় মরহুম এ বি এম তালেব আলির হাত ধরে তিনি ফেনীর রাজনীতির এক প্রবাদ পুরুষ যিনি তিন তিনবার এম পি হয়েও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাদাসিধা জীবন যাপন করে গেছেন রাজনীতিতে তার কোন বদনাম ছিলোনা। যেহেতু আমি একজন মুজিব প্রেমিক লোক সংগত কারনে আমার অবস্থান মুজিব বাদীছাত্রলীগের পক্ষে। আর যেহেতু ফেনী আওয়ামী রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন জয়নাল হাজারী ভাই সুতরাং তার নেতৃত্ব আমরা মেনে চলতাম।আর এই সুয়োগে এই মহান ব্যক্তিটিকে অতিকাছ থেকে জানার সুয়োগ হয়েছে। জয়নাল হাজারী ভাই সন্পর্কে অল্প কথায় লিখে শেষ করা যাবেনা কারন তিনি ছিলেন ফেনীর রাজনীতির যুগ থেকে যুগান্তরের একটি ইতিহাস। তার ঝুড়িতে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলার মুক্তি যুদ্ধ স্বাধীনতা বিজয় ও ফেনীর আওয়ামী রাজনীতির বিশাল তথ্য ভান্ডার । ফেনীর আওয়ামী রাজনীতিতে হাজারীর মত এমন সাহসী নেতা আর কখনো জন্ম হবে কিনা যানিনা বাংলাদেশর এক মাত্র জেলা ফেনী যা হাজারী ভাইয়ের নামে পরিচিত ছিলো।নিন্দুকেরা অনেক কথা বলে যার কোন মিল খুজে পাওয়া যায় না। বাস্তবে হাজারী এমন একজন লোক যিনি ফেনীকে খুব মনে প্রানে ভালোবাসতেন।আর হাজারী ভাই এমন একজন দল প্রেমিক লোক ছিলেন যে নাকি রাজনীতি ও দলকে ভালোবেসে সংসার ধর্ম বা বিয়ে করেননি। যদিও অনেকের কাছে জয়নাল হাজারী নামটা আতঙ্ক কিন্তু তিনি যতটা গর্জন দিতো ততটা বর্ষিত তো না তবে এটা সত্যি যে তিনি কোন কাগজের বাঘ ছিলেন না এবং কি কেউ যদি তাকে ইট মারতেন তাকে ফুল দিয়ে বরন করতেও বিশ্বাসী ছিলেন না। ফেনীর রাজনীতিতে হাজারী ছিলেন সাহসী মেধাবী বুদ্ধি সম্পন্ন রাজনীতিবিদ। এবং ফেনীর আওয়ামী রাজনীতিতে শৃঙ্খলা যুক্ত রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ তিনি । তবে রাজনীতিতে যারা তাকে গডফাদার বানিয়েছে সন্ত্রাসী বানিয়েছেন তারা তার সন্পর্কে না জেনে বানিয়েছেন জেনে নয়। যাক জয়নাল হাজারী কে নিয়ে অন্য সময় লিখা যাবে তবে তার মৃত্যুতে ফেনীবাসি একজন যোগ্য অভিভাবক হারালেন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হারালেন বঙ্গবন্ধুর একজন আদর্শের সৈনিক। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তার সাথে তার জন্য দোয়ার দরখাস্ত করছি।