নাটোর-৩ (সিংড়া) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলামের সমর্থকদের পিটিয়ে বাড়িছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে ওই আসনের নৌকার প্রার্থী জুনাইদ আহমেদ পলকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
ঈগল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শফিকুল ইসলাম শফিকের অভিযোগ, গতকাল মঙ্গলবার রাতে সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তার অন্তত ১০ জন সমর্থককে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করেছেন পলকের সমর্থকরা।
এদের মধ্যে একজন চৌগ্রাম ইউনিয়নের সারদানগর গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ হোসেন। নাটোর শহরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোহাগ বলেন, গতরাতে ২০-২৫ জন ঘরের দরজা ভেঙে ভেভরে ঢুকে তাকে লাঠি দিয়ে পেটায়। চিকিৎসকরা তার পা প্লাস্টার করে দিয়েছেন। মুখে কালো কাপড় বাঁধা থাকায় তিনি কাউকে চিনতে পারেননি।
সোহাগ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম গত রাতে আমাদের এলাকায় আসেন। আমি তার সঙ্গে ছিলাম। পরে রাত ১টার দিকে অজ্ঞাত কয়েকজন আমার বাড়িতে গিয়ে চিৎকার শুরু করে। আমি সকালে কথা বলব বলে তাদের চলে যেতে বলি। কিন্তু তারা ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।’
সোহাগ আরও বলেন, ‘আমার কোলে ছোট শিশু ছিল। বাচ্চাটাকে কোল থেকে ফেলে দিয়ে তারা আমাকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি বাড়ির বাইরে একটি গাছ জড়িয়ে ধরার পর তারা মারতে শুরু করে। আমি চিৎকার করলেও তারা থামেনি।’
তিনি বলেন, ‘মারধরের পর তারা আমাকে বলেছে নির্বাচনের আগে বাড়িতে না আসতে। এখন আমি আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত।’
যে হাসপাতালে সোহাগ ভর্তি আছেন সেখানে মূলত দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালটির চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম জানান, পায়ে গুরুতর চোট নিয়ে এসেছেন সোহাগ। পায়ে লাঠি বা এ ধরনের শক্ত বস্তুর আঘাতের কারণে হাঁটতে পারছিলেন না তিনি। এক্স-রে করে তার পায়ে ১৫ দিনের জন্য প্লাস্টার করা হয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ওই গ্রামে সোহাগ আমার গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। নৌকার সমর্থকরা দরজা ভেঙে ঢুকে তার শিশুটিকে কোল থেকে ফেলে দিয়ে মারধর করে।
তার দাবি, গত রাত ১২টার দিকে চৌগ্রাম ইউনিয়নের বাড়িয়া গ্রামে তার সমর্থক জিয়ারুল ও হাসানকে পিটিয়ে সিংড়া ছাড়ার হুমকি দেয় নৌকার সমর্থকরা। নিরাপত্তাহীনতায় তারা ঢাকার উদ্দেশে এলাকা ছেড়েছেন।
তিনি আরও বলেন, তেরোবাড়িয়া গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের বাড়িতে ঢুকে হুমকি দেন নৌকার সমর্থকরা। ভয়ে তিনি বাড়ি ফিরছেন না। এ ছাড়া শেরকোল ইউনিয়নের ধুলাউড়ি গ্রামে আমার সমর্থক মোহাইমিনুলকে মারধর করা হয়।
শফিকের বলেন, মঙ্গলবার রাতে অন্তত ১০ জনকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় কেউ অভিযোগ করার সাহস পায় না। তাই প্রার্থী হিসেবে তিনিই নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানাবেন।
এসব ব্যাপারে আজ বুধবার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবু নাসের ভুঁইয়ার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন শফিকুল ইসলামের প্রধান এজেন্ট মো. কামরুল হাসান। অভিযোগে বলা হয়েছে, হামলার সঙ্গে তেরবাড়িয়া গ্রামের আহসান, চৌগ্রামের আগুন, নওদাপাড়া গ্রামের জাহিদ, মালেক, শেরকোল ইউনিয়নের কংসপুর গ্রামের আরিফ, ধুলাউড়ি গ্রামের মিঠু, কলম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুল হক চুনু হামলার সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই জুনাইদ আহমেদ পলকের সমর্থক ও কর্মী বলেও অভিযোগে দাবি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এসব (হামলা) বিষয়ে আমি কিছুই শুনিনি। সিংড়ার বিপুল সংখ্যক মানুষ নৌকায় ভোট দেবেন। তাই আমাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর চাপ সৃষ্টি করার দরকার নেই, অনিয়ম করার দরকার নেই। আমরা কাজ ও ভালোবাসা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছি।’
সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম বলেন, পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তবে অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা তা এখনো জানা যায়নি।
নাটোরের পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।