চলতি বছর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ১০ শতাংশ কমেছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও তেল উত্তোলনকারী বড় দেশগুলোর তেল উৎপাদন নিয়ে অনিশ্চয়তার জেরে এ বছর তেলের দাম কমেছে।
গতকাল শুক্রবার ছিল চলতি বছর জ্বালানি তেল কেনাবেচার শেষ দিন। সেদিন ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি শূন্য দশমিক ১৪ শতাংশ বা ১১ সেন্ট কমে ৭৭ দশমিক শূন্য ৪ ডলারে নেমে আসে। অন্যদিকে, ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট ক্রুড বা ডব্লিউটিআই ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ বা ১২ সেন্ট কমে ৭১ দশমিক ৬৫ ডলারে নেমেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, উভয় ধরনের তেলের দাম এ বছর ১০ শতাংশের বেশি কমেছে। ফলে বছরের শেষ ভাগে তেলের দাম ২০২০ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। বছরের শেষ প্রান্তে অবশ্য দাম কমতে শুরু করে।
আগামী বছর তেলের দাম কেমন থাকবে, তা নিয়ে রয়টার্স ৩৪ জন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষক নিয়ে জরিপ করেছে। অংশগ্রহণকারীদের পূর্বাভাস, ২০২৪ সালে ব্রেন্ট ক্রুডের গড় দাম হবে ব্যারেলপ্রতি ৮২ দশমিক ৫৬ ডলার। এর আগে নভেম্বর মাসের জরিপে তাঁরা বলেছিলেন, আগামী বছর গড় দাম ৮৪ দশমিক ৪৩ ডলার হতে পারে। মূলত চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে দাম খুব বেশি বাড়বে না বলে তাঁদের পূর্বাভাস, যদিও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়লে তেলের দাম বাড়তে পারে।
তেলের দাম বাড়াতে ২০২৩ সাল জুড়ে ওপেকে ও সহযোগী দেশগুলো দফায় দফায় তেল উৎপাদন
হ্রাস করেছে। জরিপে অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা অবশ্য ওপেকের এই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অর্থাৎ এই দেশগুলো উৎপাদন হ্রাসের অঙ্গীকার কতটা রাখতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বর্তমানে ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো দৈনিক গড়ে ৬০ লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করছে, যা বৈশ্বিক সরবরাহের ৬ শতাংশ।
উৎপাদন হ্রাস এবং ওপেক থেকে অ্যাঙ্গোলার বেরিয়ে যাওয়ার কারণে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহে ওপেকের হিস্যা কমে গেছে। ২০২৪ সালের প্রথমভাগেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে ২০২৩ সালের শেষ ভাগে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহে অনিশ্চয়তা শুরু হয়েছে, ২০২৪ সালেও যা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে চলতি বছরের শেষ ভাগে গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে লোহিত সাগরের পথে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজ হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন হুতি গোষ্ঠী। বিশ্বের অনেক বড় জাহাজ কোম্পানি এই পথে জাহাজ না চালিয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে জাহাজ চালাচ্ছে, ফলে পণ্য পরিবহনের সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হচ্ছে। সম্প্রীতি অবশ্য কয়েকটি জাহাজ কোম্পানি আবারও লোহিত সাগরের পথে জাহাজ চালানোর ঘোষণা দিয়েছে। তবে এই পথে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।
বছরের শেষ প্রান্তে এসে গাজায় ইসরায়েলের হামলা আরও বেড়েছে। এতে জ্বালানি তেলের দামে প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানি কোম্পানিগুলো অবশ্য গত তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রথম তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের কূপসংখ্যা বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে জ্বালানিবিষয়ক সেবা প্রদানকারী কোম্পানি বেকার হিউজ। তারা বলেছে, ভবিষ্যতে তেলের উৎপাদন বাড়তে পারে।
২০২৩ সালে অবশ্য তেল উৎপাদনশীল কূপের সংখ্যা ১৫৭টি কমেছে। ২০২২ সালে এই সংখ্যা বেড়েছিল ১৯৩টি এবং ২০২১ সালে ২৩৫টি।