সাত দিন আগে খুচরা প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকায়। মুদি দোকানিরা বলছেন, চলতি সপ্তাহ থেকে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে ভোজ্য তেল সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলো। কাজীর দেউড়ি বাজারের সাদিয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের মালিক মো. সামছুল আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘কেন দাম বাড়ছে সেটি বলতে পারছি না। কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলছেন, কোম্পানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। তাই এখন বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’
হঠাৎ সয়াবিন তেলের দাম কেন বাড়ছে খোঁজ নিয়ে তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম নিম্নমুখী। সে কারণে ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা নিম্নমুখী। তবু বোতলজাত সয়াবিনের দাম বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত আগস্ট থেকে সয়াবিন তেলের দাম নিম্নমুখী। আগস্ট মাসের শুরুতে যেখানে প্রতি টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২০০ ডলারে, সেখানে গত নভেম্বর মাসের শুরুতে বিক্রি হয়েছে ৯৫০ থেকে ১০০০ ডলারে। এরপর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা বেড়ে প্রতি টন বিক্রি হয় এক হাজার ১০০ ডলারে। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের দাম কমতে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ ডলারে।
খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসের তুলনায় চলতি মাসে পাইকারিতে সয়াবিন তেলের দাম কমছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে যেখানে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) সয়াবিন তেল ৬ হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল সেখানে দাম কমে মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৯৪০ টাকায়। অন্যদিকে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দাম কমে প্রতি মণ পাম ওয়েল তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬৪০ টাকা।
৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত এক বছরের সয়াবিন তেল আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ে যেসব প্রতিষ্ঠান সয়াবিন তেল আমদানি করেছে তার শুল্কায়ন মূল্য ছিল প্রতি লিটারে ৫৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬৩ সেন্ট। গত ১৫ নভেম্বর জয়পুরহাটের পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিকস লিমিটেড আমদানিকৃত ২৪৩ মেট্রিক টন সয়াবিন তেলের শুল্কায়ন সম্পন্ন করে। তাতে দেখা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা সয়াবিন তেলের শুল্কায়ন মূল্য ছিল প্রতি লিটারে ৫৮ সেন্ট।
পাম অয়েল আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত এক বছরে যেসব প্রতিষ্ঠান পাম অয়েল আমদানি করেছে তার অধিকাংশের শুল্কায়ন মূল্য ছিল প্রতি লিটারে ৮৫ সেন্ট থেকে ১.০১ ডলারের মধ্যে। গত ২১ নভেম্বর সিটি এডিবল অয়েল আমদানি করা ২৬০০ মেট্রিক টন পাম অয়েল তেলের শুল্কায়ন করে। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওই তেলের প্রতি লিটারে শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৮৫ সেন্ট। এটা ছিল এই প্রতিষ্ঠানটি গত পাঁচ-ছয় মাসে যেসব পাল অয়েল আমদানি করেছে তার মধ্যে তুলনামূলক কম মূল্যে আমদানি করা।
এই হিসাবেও দেখা যায়, এখন হঠাৎ করে পাম অয়েলের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ভোজ্য তেল আমদানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত দুই-তিন মাসে যেসব তেল আমদানি করা হয়েছে তার দাম আগের তুলনায় কিছুটা কম। তাহলে কেন হঠাৎ করে খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে জানার জন্য সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার মাহফুজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।