সবুজ পাহাড়ে কোথাও সারি সারি চা-বাগান, কোথাও আবার পাথুরে নদীর স্বচ্ছ জল। সিলেট অঞ্চলের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের শীর্ষে। অনেকে এক দিনের ছুটিতে সিলেটে আসেন। কিন্তু কোথায় ঘুরবেন, তা নিয়ে সময়ের হিসাব কষতে থাকেন অনেকে। তাঁদের জন্য ,
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন বা ব্যক্তিগত বাহনে রাতে রওনা দিয়ে ভোরে পৌঁছে যাবেন সিলেট। সকালের নাশতা সেরে দিনভর ঘুরে দেখতে পারেন সিলেটের দুই উপজেলার পাঁচটি পর্যটনকেন্দ্র। ব্যক্তিগত বাহন না থাকলে সারা দিনের জন্য ভাড়া নিতে পারেন সিএনজি অটোরিকশা বা মাইক্রোবাস। খরচ পড়বে আড়াই থেকে চার হাজার টাকা।
রাতারগুল
সিলেট শহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা, মাইক্রোবাস বা ব্যক্তিগত বাহনে প্রথমে যেতে পারেন গোয়াইনঘাট উপজেলার বিখ্যাত জলাবন রাতারগুলে। শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরত্ব। পৌঁছা যাবে এক ঘণ্টারও কম সময়ে। বর্ষা মৌসুমে রাতারগুল গ্রামের ঘাট থেকেই নৌকায় উঠতে পারবেন। শুকনো মৌসুমে খানিকটা হেঁটে বনের ভেতরে যেতে হবে। সেখানে ৭৫০ টাকায় নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন বনের ভেতরটায়। বর্ষায় সবচেয়ে সুন্দর হিজল-করচের রাতারগুল। তবে শুকনো মৌসুমেও বনটি আপনার চোখে ধরা দেবে ভিন্ন রূপে।
লালাখাল
রাতারগুল থেকে ফতেহপুর-হরিপুর-তামাবিল সড়ক হয়ে ৩৭ কিলোমিটার দূরত্বে সোয়া এক ঘণ্টায় যাওয়া যাবে লালাখালে। জৈন্তাপুর উপজেলার সারি নদের আরেক নাম লালাখাল। মূলত শীতের সময় লালাখালের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। লালাখাল চা-বাগান, দুই দিকের সুউচ্চ সবুজ পাহাড় আর নদের নীলজলের মায়ায় সময় কাটবে বেশ। তামাবিল সড়কের সারিঘাট থেকে নৌকায় যাওয়া যায় লালাখাল জিরোপয়েন্ট। তবে সময় বাঁচাতে চাইলে সারিঘাট থেকে সরাসরি লালাখাল ঘাটে যেতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি নৌকা ভাড়া ৫৫০ টাকা।
ডিবির হাওর
নীলজলের লালাখাল থেকে সরাসরি যেতে পারেন সিলেটের শাপলার রাজ্য ডিবির হাওরের শাপলা বিলে। ১০ কিলোমিটার দূরত্ব শাপলা বিল স্বাগত জানাবে ৩০ মিনিটের মধ্যে। চাইলে এর আগে জৈন্তাপুর বাজারে জৈন্তা রাজবাড়ির স্থাপনা দেখতে কাটাতে পারেন কিছু সময়। ডিবি, হরফকাটা ও ইয়াম—এ তিনটি বিল মিলেই ডিবির হাওর। পাহাড়ের কোলে অজস্র লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন নৌকায়। ঘণ্টা দুয়েকের জন্য নৌকা ভাড়া ৪০০ টাকা। তবে শাপলার প্রকৃত রূপ দেখার জুতসই সময় ভোরবেলা। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বিলে শাপলা থাকে।
শ্রীপুরের রাংপানি
ডিবির হাওরকে বিদায় জানিয়ে তামাবিল সড়ক হয়ে ৮ কিলোমিটার দূরত্ব জৈন্তাপুরের শ্রীপুর চা-বাগান, হ্রদ ও রাংপানি নদ। তামাবিল সড়কের দুই পাশের চা-বাগান ও এর পাশঘেঁষা খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় মুগ্ধতা দেবে কিছু সময়ের জন্য। শ্রীপুর লেকের উল্টো দিকে পায়ে হেঁটে নামতে পারেন পাথুরে নদ রাংপানিতে। নদের স্বচ্ছ জল আর কাছের সবুজ পাহাড়ের সৌন্দর্য বেশ মনকাড়া। পাশেই রয়েছে সুপারিবাগান ও খাসিয়াপল্লি। তবে নদে নামতে চাইলে বিজিবির অনুমতি নেওয়া উত্তম।
জাফলং
এক দিনের ভ্রমণের শেষটা করতে পারেন জাফলংয়ে। নৌকা না নিয়ে সংগ্রামপুঞ্জির সোনা টিলা হয়ে পায়ে হেঁটে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ পানিতে হরেকরঙা পাথর ও ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ দেখতে যেতে হবে জিরোপয়েন্ট। হাতে সময় থাকলে সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনাও দেখতে পারেন। বলে রাখা ভালো, শুকনো মৌসুমে ঝরনায় পানি থাকে না। ডাউকি নদীর পাশেই রয়েছে খাসিয়াপল্লি ও পানপুঞ্জি। সময় থাকলে যাওয়া যেতে পারে সেখানেও। এর আগে জাফলংয়ে সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার। খাবারের জন্য জাফলংয়ে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। জনপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে সেরে নিতে পারেন দুপুরের খাবার।