মহাস্থান নিউজ:
বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজননকেন্দ্রিক হালদা নদীর পাড় এখন এক পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনসহ প্রায় প্রতিদিন বিকেলে পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন।
প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটানো, নদীর অপরূপ দৃশ্য দেখা ও নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ পেতে ছোট-বড় সবাই হালদার পাড়ে অবসর সময় কাটাতে ছুটে আসেন।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধ ঘোষণা হতেই বন্ধুরা মিলে হালদা পাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। শুক্রবারের নামাজ পড়ে চবি ক্যাম্পাস থেকে প্রথমে এক নং গেইট আসি। তারপর সিএনজি করে ফতেয়াবাদ নামি।
ফতেয়াবাদ থেকে অটোরিকশা করে হালদা নদীর পাড়ে যাই। ফতেয়াবাদ থেকে যাওয়ার পথিমধ্যে রাস্তার চারপাশে মন জুড়ানো সবুজ অরণ্য যেন দৃষ্টিনন্দিত। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার জার্নি শেষে পৌঁছাই হালদার পাড়ে।
বর্ষা মৌসুমে হালদা নদী পানিতে টইটম্বুর, আকাশে গুমোট মেঘলা আকাশ, চারদিকে প্রবাহিত উন্মাতাল বাতাস, সারিবদ্ধ বাহারি রংয়ের নৌকা সব মিলিয়ে একজন পর্যটককে মুগ্ধ করার সবকটি গুণে-গুণান্বিত হালদা নদী।
সেখানে গিয়ে আমরা প্রথমে একটি নৌকা ভাড়া করি দেড় ঘণ্টা ঘোরার জন্য। মজার ব্যাপার হলো, নৌকায় ওঠার কিছুক্ষণের মধ্যে গুমোটবদ্ধ মেঘ থেকে অঝোরে বর্ষণ যেন ভ্রমণের আনন্দ শতগুণ বেড়ে গেল।
নদীর এই উত্তাল যৌবনকে প্রদক্ষিণের পাশাপাশি নদীর বুকে বৃষ্টি বিলাস। সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা! এই দেড় ঘণ্টায় হরেক রকম অভিজ্ঞতার মধ্যে নদীর বুকে দেখা মেলে ডলফিনের।
বন্ধুদের কেউ কেউ সম্মিলিত গান ধরে, বৃষ্টিস্নাত এই ক্ষণেও বাদ যায়নি ফটোশেসন। দেড় ঘণ্টায় নদীর বুকে বিচরণের সময় কতক কিছু শিক্ষা পাই। যার মধ্যে বলতেই হয়, যে নদীর গভীরতা যত বেশি তার প্রবাহের শব্দ তত কম।
মানবজীবনেও এর গুরুত্ব অনেক। নদীতে দেড় ঘণ্টা ভ্রমণ ও নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করা সব মিলিয়ে ঘণ্টা তিনেক পর সন্ধ্যার গোধূলি লগ্নে সিএনজি রিজার্ভ করে সোজা ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এসে পৌঁছাই। অতঃপর যে যার হলে চলে যায়।
বাড়ি যাওয়ার আগে বন্ধুদের (মারুফ, এনামুল, রাসেল,তাজরিন,রিফাত, মাহফুজ, রাকিব) এমন উদ্যোগ মন-মন্দিরের শতসহস্র একগুয়েমি-হেয়ালিপনা দূর করার অমোঘ অস্ত্র বললেও কম বলা হবে।
ঋতু বৈচিত্র্যের এই বঙ্গীয় দেশে নানা রঙ্গ নিয়ে হাজির হয় বিভিন্ন ঋতু। এই রং-ঢঙে সজ্জিত বর্ষা মৌসুমের বর্ণনা দেওয়া নেহায়েত নিষ্প্রয়োজন তা সর্বজননবিদিত।
হালদা নদীর শান্তশিষ্ট, স্নিগ্ধ পরশ মাখানো সমীরণে আপন মনের শত সহস্র যাতনা যেন স্পন্দনহীন নিমেষশূন্য! স্মৃতি রোমন্থনতুল্য সময়গুলো বারংবার আসুক সেই প্রত্যাশা রইলো।