জামায়াতকে নিয়ে আবারো জোট গঠনের পরিকল্পনা বিএনপির
১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি চারদলীয় জোট গঠন করে এবং এই জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ৯৬’র নির্বাচনের পর থেকেই জামায়াত-বিএনপি সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
২০০১ এর নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করে এবং ওই নির্বাচনে জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে বিজয়ী হয়। তৎকালীন সময় বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের দুই নেতা, ঘৃণিত যুদ্ধাপরাধীকে মন্ত্রী বানান এবং তাদের গাড়িতে লাখো শহীদের রক্তে ভেজা জাতীয় পতাকা তুলে দেন। মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মুজাহিদ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রী ছিল।
জামায়াত-বিএনপির এই সখ্যতা ২০১৮ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এমনকি যখন সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করে তখন বেগম খালেদা জিয়া এর বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি সিলেটের এক জনসভায় আলেম-ওলামাদের বিনাবিচারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে এক ধরণের রহস্যময় নীরবতা পালন করা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে নানা সমালোচনা শুরু হয়। এসব সমালোচনা শর্তেও ২০১৮ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে ২০টি আসন উপহার দেয়। এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ করে পশ্চিমা মহলে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পরপর জামায়াতে ইসলামী নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারায় এবং তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলে। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপির উপর ভর করে পরগাছা হয়ে জামায়াত রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করে। শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতা যুদ্ধাপরাধী দায়ে দণ্ডিত হওয়ার পরও জামায়াতের তৃতীয়-চতুর্থ সারির নেতারা মূল নেতৃত্বে এসে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কের ধারা অব্যাহত রাখে। কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনের পর আস্তে আস্তে জামায়াত থেকে দূরে সরে আসতে শুরু করে বিএনপি। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর সুদৃষ্টি পেতে জামায়াতের সঙ্গে এক ধরণের রহস্যময় সম্পর্ক করে।
এ সময় দুই দলের সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। গেলো বছর জামায়াতও আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয় ’১৮ নির্বাচনের পর বিএনপির সাথে তাদের সম্পর্ক নেই। এর মধ্যেই বিএনপি ২০ দলীয় জোটকে আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং নতুন জোটের সন্ধানে নানা রকম রাজনৈতিক মেরুকরণ শুরু করে। অন্যদিকে জামায়াত একলা চলো নীতি নিয়ে বিভিন্ন সাংগঠনিক তৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি নতুন করে জামায়াত-বিএনপির যোগাযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই যোগাযোগ অত্যন্ত গোপনে করা হচ্ছে বলে জানা যায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জামায়াত এবং বিএনপির পরিকল্পনার মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। বিএনপি যেমন বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না ঠিক তার বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করেছে তাদের অন্যতম প্রধান মিত্র একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত।
জামায়াত তাদের সর্বশেষ মজলিসে শূরার বৈঠকে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংগঠন টিকিয়ে রাখার জন্য এবং অস্তিত্বের প্রয়োজনে এবং সরাসরি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য জামায়াত নির্বাচনে যাবে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আর এই নির্বাচনে যাওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জামায়াত-বিএনপির নতুন করে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে।
তবে বিএনপির বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলেছে, বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতের ব্যাপারে আগ্রহী এবং তিনি জামায়াতের সঙ্গে জোট ভেঙে দেয়ার বিষয়টিকে মোটেও পছন্দ করেননি। ঈদের দিন তিনি স্থায়ী কমিটির নেতাদের সঙ্গে যখন বৈঠক করেছিলেন তখনো তিনি জামায়াতের সঙ্গে আবার নতুন করে জোট গঠনের পরিকল্পনা এবং জামায়াতকে বাদ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই বিএনপিতে জামায়াতপন্থি কোন কোন নেতারা নতুন করে জামায়াতের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন।
দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে জানা যায়, সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করছে বিএনপি। সেই অভিন্ন প্ল্যাটফর্মের বাইরেও আবার ২০ দলীয় জোটকে পুনরুজ্জ্বীবিত করার ক্ষেত্রে কেউ কেউ চেষ্টা করছেন।