বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন দলটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য রাগেবুল আহসান। নির্বাচনে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন দলের ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে পরিচিত শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আলোচিত পরিবহন ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান আকন্দ।
এর আগে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি একই আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী রাগেবুলের বিরুদ্ধে লড়ে হেরে যান মান্নান। যদিও ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাঠে নেই বিএনপি। বিএনপি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে অনেকটা ‘নির্ভার’ বগুড়া আওয়ামী লীগ। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানকে নিয়েই যত অস্বস্তিতে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র যাচাই–বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বগুড়ার জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, বগুড়া-৬ আসনে মোট আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী রাগেবুল আহসান, আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান, জাকের পার্টির ফয়সাল বিন শফিক, জাপার আজিজ আহম্মেদ এবং এনপিপির শহিদুল ইসলামসহ পাঁচজনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে মুসকের ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বকেয়া থাকায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী ইমদাদুল হকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঋণখেলাপি হওয়া ছাড়াও এবং ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের তালিকায় গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ কবির আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ ছাড়া ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরের তালিকায় গরমিল থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী নয়ন রায়ের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়।
দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২১ সালের বগুড়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় আবদুল মান্নানকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বেশি ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। নৌকার প্রার্থী জামানত হারান। এ ছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনেও আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।
সাধারণ ভোটার ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৯ সাল থেকে বগুড়া-৬ আসনটি বিএনপির দখলে। সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু তিনি শপথ না নেওয়ায় উপনির্বাচনে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী ও জেলা বিএনপির তৎকালীন আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে জয়ী হন।
দলীয় সিদ্ধান্তে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ পদত্যাগ করলে গত ১ ফেব্রুয়ারি এই আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রাগেবুল আহসান জেতেন। বিএনপিবিহীন ওই ভোটে রাগেবুলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়েন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা আবদুল মান্নান।
ভোটাররা বলছেন, আবদুল মান্নান পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোট পেয়ে তাক লাগিয়েছেন। ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনেও নৌকার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তিনিই।
আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণের সুখ–দুঃখে সব সময় নানা সহায়তা নিয়ে পাশে আছি। উপনির্বাচনে ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিলেও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত হলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত।’
আবদুল মান্নান আওয়ামী লীগের কেউ নন দাবি করে নৌকার প্রার্থী রাগেবুল বলেন, তাঁকে নিয়ে আওয়ামী লীগ চিন্তিতও নয়। নৌকা শেখ হাসিনার প্রতীক, উন্নয়নের প্রতীক। নৌকার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠে নেই বলে তাঁর দাবি।
রাগেবুল আহসান আরও বলেন, বিএনপির বিভ্রান্তিতে ভোটাররা এত দিন অন্ধকারে ছিলেন। দেরিতে হলেও বগুড়াবাসী জেগেছেন। ১ ফেব্রুয়ারির উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে জনগণ বিএনপির সন্ত্রাসের রাজনীতির দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন।