আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনে বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দলে সংস্কারপন্থি হিসেবে চিহ্নিত সাবেক এ সংসদ সদস্য মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার খবরে এলাকায় ফের আলোচনায়। বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে কাহালু উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোছা. মেরিনা আফরোজের কাছে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং কাহালু উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ৩৯ বগুড়া-৪ আসন। ১৯৭৩-২০২৩ সাল পর্যন্ত এ আসনে মোট ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে। এরমধ্যে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদ দিলে থাকে ১০টি। এতে বিএনপি সাতবার, জাসদ দুবার ও জাতীয় পার্টি একবার বগুড়া-৪ আসনে সংসদ নির্বাচিত হয়েছে। ফলে বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটি।
এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫১১ জন। এরমধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪ জন ও কাহালু উপজেলার ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৪৭ জন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে ডা. জিয়াউল হক মোল্লার বাবা আজিজুল হক মোল্লা বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে তিনি মারা গেলে উপ-নির্বাচনে জিয়াউল হক মোল্লা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বগুড়া-৪ আসনে বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত হলে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি পান।
২০১৮ সালে বিএনপি তাকে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন দিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে মোশাররফ হোসেনকে দেয়। সেই নির্বাচনে মোশাররফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন।
জিয়াউল হক মোল্লা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন এমন গুঞ্জন এলাকায় চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। অবশেষে বুধবার বিএনপির সাবেক এ সংসদ জিয়াউল হক মোল্লা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর আগে গত ২৭ নভেম্বর বগুড়া শহরের মালতিনগরে তার বাসায় নন্দীগ্রাম-কাহালু উপজেলার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির সাবেক বেশকিছু নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, আমি একজন চিকিৎসক। বাবার মৃত্যুর পর বিএনপি আমাকে জোর করে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছে। বিএনপি থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। ২০০৭ সাল পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারপন্থি হওয়ার অভিযোগে আমাকে বিএনপির কোনো কমিটিতেও রাখেনি। সংস্কারপন্থিদের অনেকেই দলে ফিরেছেন, দলীয় মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছেন। অথচ আমাকে মূল্যায়ন করেনি বিএনপি। নির্বাচনী এলাকায় আমার সুনাম আছে, কর্মী-সমর্থকও আছে। এ কারণে এবার নির্বাচনে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ৪ ডিসেম্বর, প্রত্যাহার ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর ও ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে।।