দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাখিলের শেষ দিনে বগুড়ায় বিএনপির সাবেক চার নেতাসহ ৮৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর ৩৬ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে লড়াই করবেন। যাদের মধ্যে ৩ জন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানা যায়। এদিন সকাল থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বগুড়ার সাতটি আসনের প্রার্থীরা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
রিটার্নিং কার্যালয়ের নথিতে দেখা যায়, বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন ১২ জন। সবাই মনোনয়নপত্র জমা দেন। দাখিলকৃতের মধ্যে ৫ জনই স্বতন্ত্র। একজন শাহজাদী আলম লিপি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী। এ ছাড়া আসনটিতে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির সাবেক নেতা মো. শোকরানা।
বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ১১ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। জমা দেন ১০ জন। এর মধ্যে ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। স্বতন্ত্রদের মধ্যে আছেন বিএনপির সাবেক নেত্রী বিউটি বেগম। শেষ দিনে বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে মো. মনছুর রহমান অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেন। আর বেলাল হোসেন নামে একজন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন তুললেও শেষ মুহুর্তে জমা দেননি। স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন জমা দেন জেরা আওয়ামী লীগের সদস্য আকরাম হোসেন। এ নিয়ে মোট ১০ জন প্রার্থী ভোটের মাঠে নামছেন।
বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি) আসনে ১৬ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যার মধ্যে ৭ জনেই স্বতন্ত্র। এদের মধ্যে একজন অজয় কুমার সরকার আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে অনলাইনে আবেদন মিলে মনোনয়ন জমা পড়েছে ১০ জন প্রার্থীর। যদিও মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন ১২ জন। এর মধ্যে তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী শেষ মুহুর্তে মনোনয়ন জমা দেননি। আসনটিতে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটের মাঠে নেমেছেন বিএনপির হয়ে চারবারের নির্বাচিত সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা।
বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে আট জন মনোনয়ন নিয়েছিলেন। এর মধ্যে সবাই জমা দিয়েছেন। আসনটিতে কোনা স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।
বগুড়া-৬ আসনে নয়জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেননি। আর আটজন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনে সবচেয়ে বেশি ২৭ জন নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন নিয়েছিলেন। তবে প্রার্থীতা করার জন্য মনোনয়ন জমা দেন ২৫ জন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র আছেন ১৬ জন। এই আসনেও বিএনপির সাবেক নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সরকার বাদল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
এদিন বেলা ১২ টার দিকে বগুড়া জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন বগুড়া-৬ (সদর) আসনের নৌকার প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু। এর পরপরই বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসনের নৌকার প্রার্থী ডা. মোস্তফা আলম নান্নু নিজের মনোনয়ন জমা দেন। এ ছাড়াও দুপুরে বিএনপির সাবেক নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শোকরানা নিজের মনোনয়ন জমা দেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে।
এর আগে গতকাল বুধবার পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি আসনে ৯২ জন প্রার্থী মনোনয়ন উত্তোল করে। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন তুলেছেন ৩৮ জন।
বগুড়া সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসের কাছ থেকে পাওয়া নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এই মনোনয়ন তোলার মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, এনপিপি, তৃণমূল বিএনপি, সুপ্রিম পার্টিসহ একাধিক দলের প্রার্থী রয়েছেন।
বগুড়ার সাতটি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪ লাখ ৪ হাজার ৩২১ এবং নারী ভোটার ১৪ লাখ ২৪ হাজার ২৩ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৯৬৯ টি। ভোট কক্ষ স্থায়ী ৫ হাজার ৮১৫ টি ও অস্থায়ী ৪০৮ টি মিলে মোট ৬ হাজার ২২৩ টি কক্ষে ভোট দিবেন জেলাবাসী।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী- নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।
এর মধ্যে বগুড়ায় মনোয়নপত্র বাছাইয়ের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।