মহাস্থান নিউজ:
গত কয়েক দিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে উত্তরাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তা, ধরলাসহ অধিকাংশ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম): কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বারোমাসিয়া নদীসহ সব কয়টি নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিমুলবাড়ী এলাকায় শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পয়েন্টে পানি ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে। এদিকে বারোমাসিয়া নদী ও নীলকমল নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদ-নদীর তীরবর্তী হাজার হাজার মানুষ।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া জানান, গত ২৪ ঘন্টায় শুক্রবার সকাল ৬টায় ফুলবাড়ী উপজেলাসহ জেলা জুড়ে ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আমাগী ৭২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত সামান্য কমার সম্ভাবনা রয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ণ কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, ‘এ উপজেলায় ধরলা ও বারোমাসিয়া নদীর তীরবর্তী এলাকায় ১ হাজার ৪০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আমরা প্রথম দফায় ৫ টন চাল এবং ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করেছি। ৬ টন চাউল মজুত আছে। বৃষ্টি কমামাত্র পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে এসব চাল বিতরণ করা হবে। সেই সঙ্গে উপজেলায় নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়ে ধরলা নদীর ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী এলাকায় শেখ হাসিনা সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলার নদীর পানি আরো বাড়বে। এতে করে নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম): উপজেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন দিনে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপত্সীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তলিয়ে গেছে নদীতীরবর্তী চর ও নিম্নাঞ্চল। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দুধকুমার নদের পানি ভূরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোনাহাট সেতু পাড়ের ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন থেকে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদ-নদী পানি দিয়ে ভরে গেছে।
পাইকেরছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুৃর রাজ্জাক জানান, তিন দিন ধরে দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোডের্র নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
গঙ্গাচড়া (রংপুর): কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে তলিয়ে গেছে প্রায় ১৫টি চর। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কোলকন্দ ও লক্ষীটারী ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার। এদিকে পানির তীব্র স্রোতে উপজেলার শংকরদহ এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া কোলকোন্দ ইউনিয়নে বিনবিনা এলাকায় নতুন বাঁধ ও রাস্তা নদীতে ভেঙে গেছে। কোথাও ভুট্টা ও বাদামখেত তলিয়ে গেছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিঊল ইসলাম জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তার ইউনিয়নে কয়েক শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।