মহাস্থান নিউজ:
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে এসব নদ-নদী অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাসের বরাতে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, মধ্য জুলাইয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে কুড়িগ্রামে স্বল্প মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। উদ্ধার তৎপরতাসহ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় খাদ্য সহায়তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি সমতলে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
একই সময়ে দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাড়ছে ধরলা ও তিস্তার পানি। ভারী বৃষ্টি ও ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টিপাত, মঙ্গলবার দুপুরে উলিপুর উপজেলা শহরের কুড়িগ্রাম-উলিপুর সড়ক। ছবি
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। জেলার সদর উপজেলার কিছু কিছু স্থান ছাড়াও উলিপুর উপজেলা শহরে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে উলিপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে সাময়িক জনদুর্ভোগের খবর পাওয়া গেছে।
ওই উপজেলার পৌর এলাকার বিভিন্ন ড্রেন উপচে ময়লা পানি ও আবর্জনা সড়কে ভেসে যেতে দেখা গেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে কুড়িগ্রামে একটি স্বল্প মেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করছে পাউবো।
পাউবোর বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বর্তমানে মৌসুমই বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বিপদসীমায় পৌঁছাতে পারে। একই কারণে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানিও বৃদ্ধি পেতে পারে।
পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন মঙ্গলবার বিকালে বলেন, ‘সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। ১৭ জুলাইয়ের দিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যা হলে সেটি হবে স্বল্প মেয়াদি। কারণ এক সপ্তাহের মধ্যে পানি আবার কমে যেতে পারে। এরপর নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজ করতে পারে।’
সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। শাখা সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রশাসন সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয়েছে। সে অনুযায়ী বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে। দুর্গত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতার জন্য চারটি উদ্ধারকারী বোট, চারটি স্পিডবোট ও দুই শতাধিক স্থানীয় নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্কাউট, রোভার স্কাউট এভং রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জরুরি প্রস্তুতি মোকাবিলায় ১ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ৬৫০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা মজুত রয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা যাতে দ্রুত রেসপন্স করতে পারি, সেজন্য আশ্রয়কেন্দ্র ও প্রয়োজনীয় নৌকা প্রস্তুত রেখেছি। পশুখাদ্য যেন ঘাটতি না হয়, সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।’
‘বন্যা মোকাবিলায় নাগেশ্বরী, উলিপুর ও চিলমারী এই তিন উপজেলাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। বন্যা হলে এই উপজেলাগুলো আগে আক্রান্ত হয়। আমরা প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি রেখেছি’ যোগ করেন জেলা প্রশাসক।