মহাস্থান নিউজ:
গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দি মহিলা যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত শামীমা নূর পাপিয়ার মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালের বিছানায় মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছেন রুনা লায়লা নামে আরেক বন্দি।
কারাগারে মারধরের পর থেকে অসংলগ্নভাবে কথাবার্তা বলছেন বন্দি রুনা লায়লা। তাকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ৭০৭ নম্বর কক্ষে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
রবিবার (২ জুলাই) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে তার বোন রওশন আরা বলেন, শামীমা নূর পাপিয়ার নির্যাতনের শিকার হয়ে আমার বোন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার অবস্থা এখনও খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না।
হাসপাতালে মুমূর্ষু রুনা লায়লা বলেন, শনিবার (১৭ জুন) বিকালে আমাকে পাপিয়ার অধীনে ৪০১ নম্বর কক্ষে দেওয়া হয়। এর পর থেকে পাপিয়া ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমাকে অনেক মারধর করে। এসময় আমাকে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করলে আমি পড়ে যাই। পড়ে যাওয়ার পর লাথি মারে। এ সময় একজন আমার পরনের জামাটা ছিঁড়ে ফেলে। এমন অবস্থায় আমি পালানোর চেষ্টা করলে পড়ে যাই। ওরা তখন আমাকে হাতকড়া পরতে বলে।
তিনি বলেন, আমি হাতকড়া না পড়লে জোর করে হাতকড়া পরিয়ে পেটাতে থাকে এতে আমি কয়েকবার জ্ঞানহারাই এবং পাপিয়ার পিটুনিতে আমি প্রস্রাব-পায়খানা আটকাতে পারিনি। এসময় আমি বার বার পানি চাইলেও আমাকে পানি দেওয়া হয় না। পরে পানি পানি করে কাঁদতে থাকলে আমাকে ময়লা পানি খেতে দেওয়া হয় এবং মাথায় পানি ঢেলে দেওয়া হয়।
রুনা লায়লা আরও বলেন, একজন এসে আমাকে জোর করে নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। পরে দুদিকে দুই হাত ওপরে তুলে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। আরেকজন এসে আমার জামা পরিবর্তনের কথা বলে ময়লা স্তূপের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। ওইখানে ঘণ্টাখানেক মারধর করলে আমি আর কিছু বলতে পারি না। চেতনা ফিরে পেলে আমাকে ওরা ওড়না দিয়ে গাছে টানিয়ে রাখে। আমি খুব অসুস্থবোধ করি। সন্ধ্যায় জেল সুপার ওবায়দুর এসে আমার হাতকড়া খুলে দেয়।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামসুল হুদা বলেন, রোগীর শরীরে রক্ত শূন্যতা দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর রোগীর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) ওবায়দুর রহমান বলেন, রুনা লায়লা নামে ওই কয়েদি গোপনে ৭ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে কারাগারে আসেন। টাকার বিষয়ে কারাগারের হাবিলদার ফাতেমা বেগম তার কাছে জানতে চাইলে সে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে কয়েকজন কয়েদি তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে তাদের কারাবিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়েছে। আর রুনা লায়লাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কড়িহাতা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের মেয়ে। কারাগারে নির্যাতনের বিষয়ে রুনা লায়লার ভাই আব্দুল করিম গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বরাবর অভিযোগ করেন।