মহাস্থান নিউজ:
ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে রাত তখন গভীর। স্টেশনের ভেতরে এখানে-ওখানে ছড়িয়েছিটিয়ে ঘুমিয়ে আছেন অনেক মানুষ। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন আরো অনেকেই। রাত যতই গভীর হচ্ছে তাদের সংখ্যাও বাড়ছে। ঘরহীন এসব মানুষের অনেকেরই থাকার কোনো আবাস না থাকায় তারা রাত কাটাতে বেছে নেয় স্টেশনটি। পথবাসী এসব মানুষদের নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, এদের জীবনমান উন্নত করতে দরকার বেশ কিছু সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।
জানা যায়, জীবিকার সন্ধানে ঈশ্বরদীতে আসেন নিম্নআয়ের অসংখ্য মানুষ। কাজের আশায় আসা মানুষের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বেশির ভাগই শ্রমজীবী। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারিয়ে শহরমুখী হয়েছেন। এসব মানুষের অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। এ ধরনের কিছু মানুষের অন্যতম আশ্রয়স্থল বৃহত্তম ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন। শনিবার গভীর রাতে স্টেশনের ৩ ও ৪ নম্বর প্ল্যাটফরমে দেখা গেল, সারিবদ্ধভাবে শুয়ে আছেন প্রায় ১৫ জন। ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফরমেও দেখা গেল, প্রায় সমসংখ্যক মানুষ একইভাবে শুয়ে রয়েছে। ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফরমে রয়েছে পাবলিক টয়লেট। সেখানে রয়েছে গোসলের ব্যবস্থাও। তার সামনেই দেখা গেল আরো চার-পাঁচ জন শুয়ে আছে নাকমুখ ঢেকে। সবাই ছিলেন গভীর ঘুমে নিমগ্ন।
বুকিং অফিসের পাশে ফুটপাতের হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেন তারা। আবার মাঝেমধ্যে স্টেশনে বিভিন্ন লোকজন ব্যক্তি উদ্যোগ বা কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে খাবারের প্যাকেট দিয়ে যায়। তাতেও দিনের খাবার হয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নদীভাঙন, আত্মীয়স্বজন না থাকা থেকে শুরু করে নানা কারণে মানুষ শহরমুখী হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকার অবশ্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসবের সুফল পেতে হলে আরো সময় লাগবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক জোন তৈরি হচ্ছে। এগুলো তৈরি হওয়ার পর কর্মসংস্থান করা গেলে শহরে মানুষের চাপ কমবে।