মহাস্থান নিউজ:
বান্দরবান আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের সীমান্ত পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে চোরাইপথে গরু ও মহিষ আসতে শুরু করেছে। এতে হাটে ওঠা দেশি গরুর চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া মিয়ানমারের গরু-মহিষ রোগ আক্রন্ত হওয়ায় দেশি গবাদি পশুও বিভিন্ন রোগে বিশেষ করে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছেন খামারিরা।
স্থানীয় খামারিদের দাবি, অবৈধভাবে আসা এসব গবাদিপশুর কারণে ন্যায্য দামে পশু বিক্রি করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
মামুন আহম্মেদ (২৮) নামের এক যুবক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পড়ালেখা শেষ করে গরু খামারের কাজ শুরু করেন ২০২০ সালে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গত তিন বছরে গরু খামার থেকে ছয় লাখ টাকা লাভ করতে পারলেও, এ বছর মিয়ানমার থেকে অবাধে অবৈধ গরু আসায় লোকসান হবে। শুধু আমি একা নই আমার মতো স্থানীয় সব খামারিদের লোকসান হবে।’
গরুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা রেওয়াই ম্রো বলেন, দেশি গরুর ভালোই দাম পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এখন আর আগের মত দাম পাওয়া যাচ্ছে না। মিয়ানমার থেকে চোরাই গরু আসার কারণে গরু ব্যাপারীরা নায্য দামে কেউ ক্রয় করতে চায় না। বাধ্য হয়ে ক্ষতি হলেও লোকসান করে গরু-মহিষ বিক্রি করতে হচ্ছে।
আবু নাইম নামের এক গৃহস্থ বলেন, হাটে দুটি গরু বিক্রি করতে এসেছিলাম। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ হতে হচ্ছে। বিদেশি গরু চোরাচালানের কারণে বাজারে দেশি গরুর চাহিদা কমে গেছে। যার কারণে আমাদের মতো ছোট খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
বর্তমান বাজারে গরুর খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং মিয়ানমার থেকে অবৈধ গরু-মহিষ বাজারে আসার কারণে দেশি গরুর দাম উঠছে না বলে দাবি করেছেন ‘রাশেদ ডেইরি খামার’ মালিক ফরিদুল আলম।
খামারি মামুন আহম্মেদ ও ফরিদুল আলম বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা গরু ও মহিষ বেশির ভাগই রোগাক্রান্ত। এ সব গরু-মহিষের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশি গবাদি পশু।
আলীকদম উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ অফিসার থোয়াইনু মার্মা জানান, মিয়ানমার থেকে অবৈধ গরু ও মহিষ আলীকদমে বিভিন্ন স্থানে রাখার ফলে ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস (এফএমডি) ও লাম্পি স্কিন ডিজিস (এলএসডি) দেশি গরুর মধ্যে ছড়িয়েছে। রোগগুলো আগে দেখা গেলেও আক্রান্তের সংখ্যা খুব নগন্য ছিল। তবে এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা হাজারের অধিক ছাড়িয়েছে। অবৈধ গরু-মহিষ আলীকদমে আসার কারণে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাবের মো. সোয়াইব বলেন, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু-মহিষ আসা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে সভাও হয়েছে। যে সব জায়গায় মিয়ানমারের পশুর হাট বসেছে, সে সব হাটেও অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়াও চোরাচালান বন্ধে নিয়মিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। তারা অভিযানও চালাচ্ছেন।