মহাস্থান নিউজ:
আর কদিন পরেই ঈদ। ক্যাম্পাসও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সবার মাঝেই ঘরে ফেরার চাপা আনন্দ। রাত তখনও গভীর হয়নি, সারাদিনের ক্লান্তি সবেমাত্র চোখ ছুঁতে শুরু করেছে। হঠাৎ লাকির কল! মেয়েটা খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। চঞ্চলতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই উল্লাসের ছলকানিতে বলে উঠলো ‘চল কাল মেহেদি বিলাস করি?’
বৃষ্টি বিলাস শুনেছিলাম কিন্তু মেহেদি বিলাস! পুরো ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই আবার বলে উঠলো, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে হাতে মেহেদি দিবো, চমৎকার হবেনা বিষয়টা, বল?’
প্রস্তাব চমৎকার। হ্যাঁ বলাই শ্রেয়, বস্তুত না বলার সাধ্য নেই। উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে উঠলাম, ‘মেহেদী উৎসব?’ যথারীতি মেসেঞ্জার গ্রুপে জানিয়ে দেওয়া হলো।
পরদিন ‘আইন চব্বিশের’ মেহেদি উৎসব। সায় দিলো সবাই। সকলের আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। কে কীভাবে হাত রাঙাবে তাই নিয়েই যেন গোলমাল বাঁধার উপক্রম।
পরের দিন ছিলো ঈদের আগে শেষ ক্লাস। এই দিনটাতে রীতিমতো আড্ডা-গল্প বেশি হয়। কেননা দীর্ঘদিন কারো সঙ্গে কারো দেখা হবে না! সকালটা ছিলো স্নিগ্ধ। রূপকথার পাতায় যেমন চমৎকার সকালের বর্ণনা থাকে, যেনো ঠিক একই উপমা।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি লাকি সবার আগেই উপস্থিত। একে একে সবাই এলো, শেষ ক্লাস বলে কথা! ক্লাসে স্যার আসলেন। পড়াচ্ছেন আইন, আইনের ধারা-উপধারা অথচ সবার মনোযোগ অন্য দিকে।
একটা চাপা উত্তেজনা সবার ভেতর! কারো সাথে চোখাচোখি হলেই মুচকি হাসি! শিশু যেমন মায়ের অগোচরে মুখে আঙুল দিয়ে ফেললে মায়ের চোখে পড়লেই নির্মল লজ্জার হাসি দেয় ঠিক তেমনটাই।
বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্লাস শেষ হলো। সবাই হুমড়ি খেয়ে বসলো, মুখে একটাই রব ‘মেহেদি কই’ অতঃপর উৎসবের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও স্পন্সর লাকি তার ব্যাগ থেকে বের করলো মেহেদি টিউব।
সবার চোখে মুখে বাধ ভাঙা উল্লাস! কেউ কেউ আবার উচ্ছ্বাসে হাততালি দিয়ে উঠলো। সব মেয়েরা গোল হয়ে বসলো, কেননা এবার মেহেদি লেপনের পালা।
পুরো ক্লাসে চমৎকার ডিজাইনার আকলিমা। সুতরাং বলাবাহুল্য হাত রাঙানোর দায়িত্ব নিঃসন্দেহে তার উপরেই। গোল হয়ে বসা হাতগুলো একেক করে আঁকাতে শুরু করলো সে।
শুরুটা হলো লাকির হাত থেকেই। এরই মাঝে শান্তার হাতে অর্ধেকটা ফুল এঁকে দিয়ে হুট হয়ে গায়েব তানজিলা। একটু একটু করে সেই অমীমাংসিত ফুলের ইতি টানলাম।
হাত রাঙানোর সঙ্গে চলছে গানের কলি খেলা। এলোমেলো লিরিকের গান আর হাসাহাসিতে জমে উঠলো উৎসব। একে একে মারিয়া, এনজি, দোলা, তানজিলার হাতেও আঁকা হলো একই ডিজাইন।
তারপরও কার চেয়ে কার ডিজাইন সুন্দর তা নিয়ে ছোট খাটো একটা যুদ্ধও হয়ে গেলো। বেচারি আকলিমা! তার উপরই চলতে থাকলো মিষ্টি অত্যাচার।
তবে এ উৎসবে শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেরাও এলো গানের তালে তাল মিলাতে। আগ্রহী ছেলেরা উৎসব ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
এরই মাঝে ডেকে আনা হলো জুনিয়র জামিলকে। কেননা ভিডিওগ্রাফিতে তার তুলনা চলে না। প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে মিললো অবকাশ, সঙ্গে সঙ্গেই জামিলের ভিডিও নেওয়া শুরু। শ্রেণীকক্ষ থেকে শুরু করে মুগ্ধকর বিস্তীর্ণ মাঠ, কোথাও বাদ রাখলো না।
যে মেয়েটা ক্লাস শেষ হলেই টুপ করে গায়েব হয়ে যায়, সেই মেয়েটাও আজ বিকেল অব্দি ক্যাম্পাসে। যে মেয়ে বিষন্ন সময় কাটায় আজ তার ঠোঁটের কোণেও কল্লোলিনী নদীর মতো হাসি।
উৎসব তো এমনই, ধরা বাঁধা নিয়ম ছিন্ন করে সবাইকে এক কাতারে আনতে পারে, সবার মুখে ফুটিয়ে তোলে আকাশ সমান আনন্দ তা ই তো উৎসব। এই মেহেদি উৎসব জীবনে এক অনন্য সুন্দর দিন হিসেবেই মনে গেঁথে থাকবে।
সবাই তো বলে আকাশে যত তারা আইনের তত ধারা, আর আনন্দের? এই উৎসবের মধ্য দিয়ে যেন ঈদের আগেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করে ফেললাম সবাই মিলে।