মহাস্থান নিউজ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কবরস্থানে পাঠানোর’ হুমকি দেওয়ায় রাজশাহী জেলা বিএনপির সেই আহবায়ক ও সাবেক চারঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদ এখন কারাগারে। তবে থেমে নেই তার অনুসারীরা।
ইতিমধ্যে চাঁদকে মুক্তির দাবি জানিয়ে পোস্টার লাগাতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে সুরুজ জামান নামে এক পৌর বিএনপি নেতা। তার পরেও তারা রাতের আধারে পোস্টার মারার চেষ্টা করছে। তবে বাঘায় দু’দফা চাঁদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করায় এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বিএনপি নেতারা।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাতে বাঘায় চাঁদের মুক্তির দাবি নিয়ে ছাপানো পোস্টার মারতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন পৌর বিএনপি নেতা সুরুজ জামান। এ সময় পালিয়ে যায় ছাত্রদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজন। ফলে ভেস্তে যায় চাঁদের পোস্টার লাগানো।
এ ছাড়া বাঘায় দুই দফা অবাঞ্চিত ঘোষণা করা বিতর্কিত বিএনপি নেতা চাঁদের পোস্টার যেই মারতে আসুক না কেন তাকে ছেড়ে দেবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। ফলে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে বাঘা বিএনপি।
উপজেলা স্বেচ্ছসেবক লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত পোনে ১২টার সময় বাঘা পৌর ভবনের সামনে ওয়ালটন প্লাজা ও তার আশপাশের ভবনে বাঘায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা বিএনপি নেতা আবু সাইদ চাঁদের মুক্তির দাবি নিয়ে প্রকাশ করা পোস্টার লাগাচ্ছিল স্থানীয় বিএনপি ও যুবদল নেতা যথাক্রমে সুরুজ জামান ও জাহাঙ্গীর হোসেনসহ কয়েকজন। এ সময় পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নয়ন সরকার ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন মিল্টন এসে তাদের পোস্টার লাগাতে নিষেধ করে। এ নিয়ে সেখানে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে বাঘা থানা পুলিশ এসে প্রায় শতাধিক পোস্টারসহ বিএনপি নেতা সুরুজ জামানকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। এ সময় অন্যরা পালিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গত ১৯ মে শুক্রবার পুঠিয়ার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপির সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে করবস্থানে পাঠানোর হুমকি দেন রাজশাহী বিএনপির আহবায়ক আবু সাইদ চাঁদ। এ সময় তিনি বলেন, ‘আর ২৭ দফা বা ১০ দফা নয়’। এখন থেকে এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবরে যাবি। তার এ বক্তব্য শুনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ক্ষমতাশীল দল আওয়ামী লীগের নেত্রীরা। এরপর দেশব্যাপী চাঁদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে চারঘাট-বাঘায় চাঁদকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে দুই উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তাদের সকল সহযোগী সংগঠন। এর আগে ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী ও চারঘাট-বাঘার সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করার চাঁদকে বাঘায় অবাঞ্জিত ঘোষণা করেছিল উপজেলা আওয়ামী লীগ।
বাঘা থানার ওসি খাইরুল ইসলাম জানান, চাঁদের বিরুদ্ধে বর্তমানে অর্ধশতাধিক মামলাসহ অসংখ্য জিডি রয়েছে চারঘাট থানায়। তিনি ২০১৪ সালে ট্রেনের লাইনচ্যুত করা থেকে শুরু করে-গাড়ি পুড়ানো, নিজ ওয়ার্ডে নির্বাচনের মাঠ দখল, বোমা হামলা, ককটেল নিক্ষেপ, হত্যা, জঙ্গি প্রশ্রয় ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় তার নামে বিস্ফোরক এবং সরকারি কাজে বাধা দান ও ২৭ জন নিরীহ বেকার যুবককে চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ-লক্ষ টাকা আত্নসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
ওসি আরও বলেন, নানা কারণে চাঁদ একজন বিতর্কিত নেতা। এই নেতার মুক্তির দাবি নিয়ে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া রাতের আঁধারে গোপনে পোস্টার লাগানোর অভিযোগ এবং সরকারি দলের নেতাদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা লক্ষ করে সুরুজ নামে এক বিএনপি নেতাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে তার মুক্তির পোস্টার অন্য যে কেউ লাগিয়ে দিতে আসলে তাকে ছাড়া দেওয়া হবে না বলে দাবি করেছেন বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল।