মহাস্থান নিউজ: রাশেদ
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন দেশে অবশ্যই হবে। তবে সেই নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এর আগে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। সোমবার (১৯ জুন) বিকেলে বগুড়ার সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে এক মহান আন্দোলনে শরীক হয়েছে তরুণেরা। তারেক রহমান সেটা করতে পেরেছেন। তেতুলিয়া থেকে সেই রাজশাহীর পদ্মার তীরের তরুণরা এখানে সমবেত হয়েছেন। এই দেশটা তোমাদের (তরুণ)। তোমরাই এই দেশটাকে রক্ষা করবে। যে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে সেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আজকে বিপন্ন তা রক্ষা করতে হবে। এহিতাস স্বৈরাচারকে হটিয়েছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতার আরও বলেন, দেশ আজ চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হারিয়ে গেছে। এখন তরুণ সমাজের প্রতি আমাদের আবদার, সময় এসেছে দেশ রক্ষা করার। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, তোমাদেরকে ভবিষ্যত ডাক দিচ্ছে। দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করার। অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছি আমরা। এমন সময় অতীতে আর ছিল না। সরকার জোর করে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে পাকিস্তানি হানাদারদের মতো। আবার তারাই দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করেছে। ১৭৯১ সালে একটাই চেতনা ছিল বাংলাদেশক একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার। দেশের সমাজকে গণতান্ত্রিক সমাজে প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে তণতন্ত্রকে ধ্বংস করে কয়েকবার একতরফা নির্বাচন করে জনগণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে গেছে। ফখরুল বলেন, এই সরকার রাজনৈতিক কারণে মেধাবীদের চাকরি দিতে পারে না। তারা ব্যবসার কোনো সুযোগ দিতে পারে না। চার কোটি বেকার চাকরি পাচ্ছে না। তারা নিজেদের ধনী বানাতে ব্যস্ত। তারা লুট করে বিদেশে পাচার করবে, বাড়ি বানাবে, সেই বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। তাদের একটাই লক্ষ্য লুট করা। দেশের উন্নয়নের সমালোচনা করে এই নেতা আরও বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) বলে এতো উন্নয়ন কী তারা দেখতে পায় না? উন্নয়ন তো মানুষ বুঝতেই পারে না। কয়েকটি উড়াল সেতু, কয়েকটা ফ্লাইওভার, কয়েকটা ট্যানেল বানালে উন্নয়ন হয়না। উন্নয়ন বলে সেইটাকে যখন আমার দেশের মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খাবার খেতে পারবে। মোটা কাপড়, মোটা চালের ভাত খেতে পারব। সেই ব্যবস্থা করে নাই। সাধারণ মানুষের চিন্তা করেনি। তারা ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি সরকার। হিরোক রাজার দেশ সিনেমার গল্প উল্লেখ করে ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের দড়ি ধরে টান মেরে রাজাকে খান খান করতে হবে। ভয়ে সমাবেশে আসার পথে গড়ি পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই সরকার আসলে কাপুরুষ। এতো ভীতূ যে গাড়ি চলতে দিলে বগুড়ায় জায়গা দিতে পারত না। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, করো ভয়ে তিনি ভীত না। তাহলে বিদেশ থেকে এসে তিনি এই কথা কেন বললেন; যে আমাদের তারা সরায়ে দিতে চায়। আপনিই (প্রধানমন্ত্রী) বলেন অনেক শক্তিশালী সেই দেশ। আমাদের দুই মিনিটেই শেষ করে দিতে পারে। আবার তারাই বলছে, ভিসা নীতীতি তারা ভয় পায় না। তারা নতুন ভিসা নীতি চালু করবে। এখন জনগণ কী করবে? প্রকৃতপক্ষে তাদের বক্তব্য শুনে ঘোড়াও হাসে। আমারা মানুষকে সাথে নিয়ে আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে চাই। আমরা মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে জন্য কী করেছে? উত্তরের মানুষের জন্য তিস্তার পানি চুক্তি করতে পারেননি। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে পারেন নাই। এই সরকার আমাদের জন্য একটি জিনিসি এনেছে। তা হলো ঋণ। লোডশেডিংয়ের বিষয় উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, দেশে বিদ্যুৎ নাকি ফেরি করে বিক্রি করতে হবে। এখন বিদ্যুৎ কোথায়? আওয়ামী লীগ সব খেয়ে ফেলেছে। এরা সব খেয়ে ফেলেছে। এরা যা পায় তাই খায়। এরা দেশ জাতি খেয়ে ফেলছে। গণতন্ত্র রক্ষা লড়াই আমাদের বিএনপির লড়াই নয়। এই লড়াই সমগ্র জাতির লড়াই। এবং এই লড়ায়ের জন্য আমাদের নেতা তারেক রহমান পরিষ্কার করে বলেছেন, আমাদের দাবি একটা। সেই দাবি হচ্ছে আমাদের ভোটাধিকার ফেরত দিতে হবে। এই জন্য সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এবং তত্ত্ববধায়ক সরকার অথবা নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে। নতুন একটি নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে নতুন সরকার গঠন করা হবে। এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এই দাবি আদায় হবে রাজপথে। সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, তারা গুম করছে, খুন করছে, তাদের সরিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমাদের পরিষ্কার কথা, নির্বাচন অবশ্যই হবে। সেই নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। ৪০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তার আগে কোনো নির্বাচন নয়। তরুণেরা গর্জে উঠুন আবার। আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা মুক্তি চাই। সমাবেশে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় এসময় আরো বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রংপুর বিভাগীয় বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান, সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান বিজয়, বগুড়া জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খাদেমুল ইসলাম খাদেম, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম শুভ, সদস্য সচিব আবু হাসান, জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম সিদ্দিকী রিগ্যানসহ প্রমুখ। এদিকে দুপুরের মধ্যেই বগুড়া সেন্ট্রাল হাইস্কুল মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে তারুণ্যের সমাবেশ। উত্তরের ১৬ জেলার হাজার হাজার নেতাকর্মী ট্রাক, বাস, মাইক্রোবাসের বহর নিয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করে। এছাড়াও সকাল থেকে বগুড়ার ১২টি উপজেলা থেকে পৃথক পৃথক মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশকে ঘিরে পুরো শহরজুড়ে পুলিশের কড়া নজরদারি ছিল। সে কারণে কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।।