মহাস্থান নিউজ:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। রাকসু আন্দোলন মঞ্চের নেতা আব্দুল মজিদ অন্তরের আহ্বানে সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ ড. জোহা চত্বর থেকে শুরু বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে মিলিত হয় বলে আব্দুল মজিদ অন্তর জানিয়েছেন। তবে বেলা ১১টার দিকে আব্দুল মজিদ অন্তরের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। ফলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ভেতরে আটকা পড়েছেন। আর যারা বাইরে ছিলেন তারা ভেতরে ঢুকতে পারছেন না। এদিকে যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে বিপুল সংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ক্যাম্পাসে বাড়ানো হয়েছে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতাও। অন্যদিকে গত রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনাস্থল বিনোদপুরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এরমধ্যেই আজ রবিবার (১২ মার্চ) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পুড়ে যাওয়া দোকানের পাশে হতাশ হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া সংঘর্ষের পর থেকে নগরীর তালাইমারী থেকে চৌদ্দপাই পর্যন্ত রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাইসাইকেল ও রিকশা সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। উল্লেখ্য, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে এলাকাবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলার একপর্যায়ে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৭ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়। অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পরই রাতের মধ্যেই বিজিবি সদস্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহার করে র্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে এখনো বিপুল সংখ্যক র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এদিকে গত রাতে পুলিশের রাবার বুলেটে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী বিদ্ধ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ হাসান দাবি করেন, পুলিশের বুলেটে আহত ২০ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কিছু রাবার বুলেট ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিনোদপুর গেটের পুলিশ ক্যাম্প ও বেশকিছু দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর হওয়ায় শিক্ষার্থীদের সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়েছে।
স্থানীয় ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, শিক্ষার্থীরা কমপক্ষে অর্ধশত দোকানে হামলা ও ভাংচুরসহ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় একটি বাড়িও ভাঙচুর করা হয়। ক্ষতিগ্রস্তরা সবাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভাড়া কম দেয়া ও সিটে বসা নিয়ে বিনোদপুর গেটের কাছে ‘মোহাম্মদ’ নামের একটি বাসের চালক ও হেলপারকে পেটান শিক্ষার্থীরা। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চালক ও হেলপারকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। অনুমান চার ঘণ্টা ধরে চলমান সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় সংঘর্ষে বেশ কিছু মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ও দোকান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া বিনোদপুর গেটের পুলিশ ক্যাম্পেও আগুন দেওয়া হয়। তবে কারা এই ভাঙচুর আগুন দিয়েছে তা নিশ্চিত করা হয়নি। সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানীয় অধিবাসী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।
সংঘর্ষে ১৫০ থেকে ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন বলে গত রাতে সাংবাদিকদের জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম। তিনি আরও জানান, আহত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স ও বাসে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক জানান, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের সময় বিনোদপুর বাজারে কয়েকটি দোকানে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেননি প্রক্টর।’