মহাস্থান নিউজ:
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের পর ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। রোববার (১২ মার্চ) ও সোমবার (১৩ মার্চ) এই দুদিন ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) থেকে ফের শুরু হবে ক্লাস-পরীক্ষা। শনিবার (১১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মাননীয় উপাচার্যের আদেশক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসমূহ যথারীতি চলবে। অন্যদিকে সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ও সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যের পাশাপাশি ৭ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। রাতেই পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি বিজিবির আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা বিনোদপুর ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটের পাশের পুলিশ ক্যাম্পসহ বিনোদপুর বাজারের বিপুল সংখ্যক দোকানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া থেকে মোহাম্মদ পরিবহণের একটি বাসে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। প্রথমে বাসের সিটে বসা ও পরে ভাড়া নিয়ে গাড়ির সুপারভাইজার রিপন ও ড্রাইভার শরিফুলের সাথে আকাশের বাসের মধ্যে বচসা হয়। বিষয়টি আকাশ ফোনে তার সহপাঠিদের জানান। আকাশের ওই শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা ৬টার আগেই বিনোদপুরে অপেক্ষায় ছিলেন। বাসটি বিনোদপুরে আসলে আগের বচসাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেটে আবারো কন্টাক্টারের সাথে আকাশের ঝামেলা হয়।
তখন স্থানীয় একাধিক দোকানদার এসে আকাশ ও তার সহপাঠি শিক্ষার্থীদের সাথে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়পক্ষে মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা হামলার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে ছাত্রলীগ সভাপতি গোলাম কিবরিয়া দ্রুত সেখানে উপস্থিত হন। এসময় স্থানীয়রা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে কিবরিয়াসহ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভেতরে অবস্থান নেয়। এই খবর পেয়ে বিনোদপুর সংলগ্ন মতিহার হল, বঙ্গবন্ধু হল, শের-ই-বাংলা হল, নবাব আব্দুুুুুুুুুুুুুুল লতিফ হল, শাহ মখদুম হল ও আমীর আলী হলের শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা ও গাছের ডালপালা হাতে বিনোদপুর বাজারে গিয়ে এলাপাতাড়ি দোকানপাটে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে ক্রমাগত ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে স্থানীয়রা। এসময় স্থানীয়দের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ঘটনাস্থল বিনোদপুরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা অবস্থান নিয়ে সংঘর্ষ থেমে যায়। এক পর্যায়ে বিনোদপুর গেট সংলগ্ন পুলিশ ক্যাম্পে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
সংঘর্ষ চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে মাথা, হাত-পা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে অন্তত ২৫ শিক্ষার্থী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত ১০ শিক্ষার্থীকে রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিনোদপুর গেটে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিনোদপুর বাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করছিল কয়েকশ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে বিনোদপুর বাজারের দক্ষিণ পাশ থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়ছিল স্থানীয়রা। এর আগে বিনোদপুরে মেসে যাওয়ার পথে স্থানীয়দের আক্রমণের শিকার হন ৭/৮ শিক্ষার্থী। এসময় সাংবাদিকের উপরও হামলা করেন স্থানীয়রা।
ছাপচিত্র বিভাগের আহত শিক্ষার্থী আকাশ জানান, আমি রাস্তার উপরে ছিলাম হঠাৎ, স্থানীয়রা আক্রমণ করেন। এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। আরেক আহত শিক্ষার্থী বলেন, মারামারির ঘটনা শুনে গেটের দিকে গেছিলাম, তখন বাহির থেকে ছোঁড়া ইটের আঘাতে আমার মাথা কেটে যায়। এছাড়া বিনোদপুর বাজারের বিপুল সংখ্যক দোকানে অগ্নিসংযোগ ছাড়াও উভয়পক্ষের বেশকিছু মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।