মহাস্থান নিউজ:
বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে রোপা আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। আর ধানের তো খবরই নেই। সরকার নির্ধারিত ধান ও চালের দাম খোলা বাজারের চেয়ে কম হওয়ায় সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষক ও চাল কল মালিকরা। তবে মিলের লাইসেন্স টিকাতে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ গুদামে চাল দিচ্ছেন।
জানা গেছে, আমন মৌসুমে গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে খাদ্য বিভাগ সরকারি তালিকাভুক্ত ২১৪ টি হাসকিং ও ১৩টি অটো রাইচ মিল থেকে ৫০৮৭ মেঃটন চাল এবং কৃষকদের নিকট থেকে ৬৪৯ মেঃটন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুপচাঁচিয়ার দু’টি খাদ্য গুদামে কোনো ধানই ওঠেনি ।
আর চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৩২৩৯মেঃটন। এতে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চাল সরবরাহের শেষ দিন ২৮ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৮৪৮ মেঃটন চাল কম সংগ্রহ হয়েছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, আমন মৌসুমে ২৮টাকা কেজি দরে ৬৪৯ মেঃটন ধান এবং ৪২টাকা কেজি দরে ৫০৮৭ মেঃটন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতিমধ্যে ১২৩টি হাসকিং মিলার ও ৯টি অটোরাইচ মিলার পে-অর্ডার করে সরকারের সাথে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এই ১৩২টি মিলার তাদের চুক্তি মোতাবেক ৩২৩৯মেঃটন চাল সরবরাহ করেছেন।
উপজেলার কাথহালী গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে মণ প্রতি ১হাজার ২৮০টাকা। আর সরকার নির্ধারিত মূল্য ১ হাজার ১২০টাকা। দামের এ ফারাকের জন্য গুদামে ধান দেয়া হয়নি। তাছাড়া গুদামে ধান দিতে গেলে অনেক নিয়ম কানুন মানতে হয়। এটা কৃষকদের জন্য ঝামেলা।
চালকল মালিকরা জানান, মৌসুমের শুরু থেকেই সরকার নির্ধারিত ধান ও চালের মূল্যের চেয়ে বাইরে খোলা বাজারে দাম বেশি হওয়ায় খাদ্য গুদামে ধান ও চাল দিয়ে লোকসানে পড়তে চাননা কৃষক ও অনেক মিলার। তাই বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় ইচ্ছা থাকলেও গুদামে চাল দিতে পারেননি অনেক মিলার। আর বাজারে ধানের দাম বেশি পেয়ে সরকার নির্ধারিত দামে গুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহ হারিয়েছে কৃষকরা।
উপজেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমন মৌসুমের শুরু থেকেই ধানের দাম বেশি হওয়ায় ধান কিনে চাতালে সিদ্ধ করে শুকিয়ে মিলে ভেঙ্গে সার্টার করে চাল গুদামে সরবরাহ করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ লোকসানের ভয়ে অনেক মিলার সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েও চাল দিচ্ছেন না। তবে মিলের লাইসেন্স টিকাতে বাধ্য হয়ে কোনো কোনো মিলার চাল দিচ্ছেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেবেকা সিদ্দিকা জানান, আমরা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় খাদ্য গুদামে ধান দিতে তাদের অনীহা। আর যে ১৩২জন মিলার গুদামে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তারা তা পূরণ করেছেন। অন্য যেসব লাইসেন্সধারী মিলার চাল দিচ্ছেন না তাদেরকে ইতিমধ্যে জেলা খাদ্য অফিস থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে।