রির্পোট
গাবতলী প্রতিনিধি: তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে নিখোঁজ বগুড়ার গোলাম সাঈদ রিংকুর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। ছেলের সন্ধানে প্রহর গুনছে বাবা-মাসহ স্বজনেরা।
রিংকু বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইলের দেওনাই গ্রামের গোলাম রব্বানীর ছেলে। কাগইল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন তিনি। এরপর বগুড়া শহরের এপিবিএন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ২০১৫ সালে স্কলারশিপ নিয়ে তুরস্কে পড়তে যান।
সেখানে কারামানমারাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি পার্ট টাইম চাকরি করতেন কৃষক পরিবারের সন্তান রিংকু।
মঙ্গলবার দুপুরে স্বজনেরা জানান, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ খাহরামানমারাসে রিংকু বসবাস করতেন। তুরষ্কের ভয়াবহ ভূমিকম্প সেই ভবন পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর থেকে তার বন্ধুবান্ধবরা তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। এই খবর গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রিংকুর বাড়িতে জানান তারা।
ভূমিকম্পের পর থেকে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি রিংকুর পরিবারের লোকজন। এরপর বাড়ির লোকজনও তাকে ফোনে পাচ্ছেন না। রিংকু বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন তাও জানেন না তারা।
রিংকুর ছোট ভাই গোলাম রসুল রিফাত জানান, রাতে তার বোন রিংকুকে ফোন দিতে বলেন। কিন্তু হোয়াটস অ্যাপে ফোন দিলেও সাড়া মেলেনি। পরে রিংকুর এক বন্ধুকে ফোন দিলে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারেন রিফাত।
তিনি বলেন, আমরা দূতাবাসেও খোঁজ নিয়েছি। সেখান থেকেও এখন পর্যন্ত কিছু জানাতে পারেনি।
বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ২০১৫ সালে তুরস্কে যায় রিংকু। এরপর ২০১৭ সালে এসেছিল একবার । করোনার কারণে এখনও অনার্স শেষ হয়নি। আর কিছু দিনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এখন সব শেষ।
ছেলের খোঁজ না পেয়ে শোকে মুহ্যমান মা সালেমা খাতুন। স্থিরভাবে কোনো কথা বলতে পারছেন না। সালেমা খাতুন বলেন, এখন সব শেষ। সরকারের কাছে আমার চাওয়া ছেলে যে অবস্থায় থাক, আমরা যেন তাকে কাছে পাই।
নিখোঁজের বাবা গোলাম রব্বানী বলেন, আমার আর কিছু বলার নেই। আল্লাহ, আমার ছেলেকে যেন ফিরে পাই, এটাই চাওয়া।
রিংকুর নিখোঁজ হওয়ার খবরে অন্য আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরাও শোকে মুহ্যমান। তাদের সবার চাওয়া রিংকুকে যেন আবার দেখতে পান তারা।
ফুফাতো ভাই খায়রুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে রিংকু আমার ভাইকে পড়ালেখার জন্য মামা সব শেষ করছে। জমি-জমা বেচে তাকে পড়তে পাঠায়ছে বিদেশে।
গতকাল রাত ৮ টার দিকে সংবাদ পাইছি। তারপর থেকে রিংকুর কোনো খোঁজ নেই। আমাদের আশা ভাইটা যেন বেঁচে থাক। একান্তই যদি তাকে জীবিত না পাই, অন্তত তার মরদেহ যেন ফিরে পাই। সরকার যেন তার দেহ ভালোভাবে আমাদের কাছে আনার ব্যবস্থা করে।