গত বছর ঢাকা শহরে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ। এ সময় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০.০৩ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য পণ্যে মূল্যস্ফীতি ১২.৩২ শতাংশ। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে চাল, আটা, ডাল, বেকারি পণ্য এবং চিনি। এছাড়া এ সময় মাছ, ডিম এবং দেশি মুরগি, ভোজ্য তেল, আমদানিকৃত ফল, চা/কফি, স্থানীয় এবং আমদানিকৃত দুধ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসামগ্রী এবং পরিবহন খরচ অতিমাত্রায় বেড়েছে।
গতকাল শনিবার ক্যাবের পণ্য ও সেবার মূল্যবিষয়ক প্রতিবেদন ২০২২-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটি রাজধানীর (ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে গঠিত) ১১টি বাজার থেকে মাসিক দামের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। দৈনিক দাম পর্যবেক্ষণে ১৪১টি খাদ্যসামগ্রী, ৪৯টি খাদ্যবহির্ভূত পণ্য এবং ২৫টি পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
গতকাল এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি এবং মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন উৎপাদন খরচ, আমদানিকৃত পণ্যের দাম এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের পর গত বছরে সাধারণ মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। শহর ও গ্রামে উভয় জায়গায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মন্দাভাব সৃষ্টি হয়েছে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ মানুষের প্রকৃত আয় এবং পারিবারিক কল্যাণ হ্রাস করে। এটি বেতনভোগী নিম্ন-মধ্যম এবং মধ্যম আয়ের পরিবারের দুর্দশা বাড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে ক্যাব তাদের সুপারিশে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্তভাবে কভার করার জন্য যথাযথ পরিবীক্ষণের সঙ্গে ওএমএস কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করার কথা বলেছে। এছাড়া দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হবে। সুপারিশে বলা হয়, সরকার দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর জন্য ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যসহায়তা এবং সামাজিক সুরক্ষার অধীনে সহায়তা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রক্ষা করতে সরকারের শহরাঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা স্কিম বাড়ানো উচিত।