ভারতীয় উপমহাদেশে বিয়ের ভরা মৌসুম শীতকাল। উপমহাদেশের বিয়ের অনুষ্ঠানের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে সোনার গয়না। কিন্তু ঠিক সেই সময়ে ভারতসহ বাংলাদেশও সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায়।
গত শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম (২৪ ক্যারেট) ৫৭ হাজার ৮০০ রুপিতে উঠে যায়। জিএসটি যোগ করলে দাম পড়ে যায় প্রায় ৬০ হাজার রুপি। আজ সকালে অবশ্য দাম কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ৫০ রুপি।
তার সঙ্গে জিএসটি যোগ করলে যা দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৪০০ রুপির বেশি। গয়না ব্যবসায়ীদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে অনেক ছোট দোকানের বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে থাকলেও ভারতের আমজনতার কাছে সোনার এই দাম অনেক বেশি। ফলে ব্যবসার ভবিষ্যৎ খুব ভালো নয় বলেই তাঁরা মনে করছেন। খবর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের।
ভারতের বাজারসংশ্লিষ্ট মানুষেরা বলছেন, বিয়ের মৌসুম বলে কিছু ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। বিয়েতে সোনা দিতেই হয়, তাই বাধ্য হয়েই কিনছেন তাঁরা। কিন্তু দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্রেতাই সোনা কেনার পরিমাণ কমিয়েছেন বা অর্থ বাঁচাতে পুরোনো গয়না ভাঙিয়ে নতুন গয়না তৈরি করছেন। আবার দাম বাড়তে পারে, এই আশঙ্কায় কেউ কেউ আগাম গয়না কিনে রাখছেন। এমনিতেই সবকিছুর দাম বাড়তি। সেই সঙ্গে সোনার দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে বিয়ে-অন্নপ্রাশনের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানে সোনা উপহার দেওয়ার যে ঐতিহ্য, তা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
পণ্যের দামের ওঠানামা নির্ভর করে চাহিদা ও জোগানের ওপরে। তবে সোনার ক্ষেত্রে ভোক্তার আচরণ গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি মনে করেন সামনে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, তাহলে অর্থের ওপর ভরসা কমে যায়। মূল্যস্ফীতি বাড়লে অর্থের মূল্যমান হ্রাস পায়। তখন মনে করা হয়, এমন কিছু পণ্য কিনে রাখতে হবে, যার ক্ষয় নেই। এমন নয় যে বছর বছর সোনার খনি থেকে সোনার সরবরাহ আসতেই থাকে। সুতরাং, এখানে চাহিদা-জোগানের সম্পর্কের তুলনায় ভোক্তার আচরণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এদিকে গত বছরের শুরু থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার ফলে অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া আশঙ্কা মোকাবিলায় সোনার দিকে ঝুঁকেছিলেন মানুষ। কিন্তু নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে হিসাব-নিকাশ বদলে যায়। তাই সোনা থেকে অর্থ তুলে বন্ডে বিনিয়োগ সরিয়ে নেন বিনিয়োগকারীরা। এখন আবার তার উল্টো ঘটতে শুরু করেছে।
টানা কয়েক মাস নীতি সুদহার বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে নীতি সুদহার বাড়লেও সেই বৃদ্ধির গতি কমতে পারে বলে ধারণা বিনিয়োগকারীদের। সে কারণে আবার তাঁরা বন্ড থেকে সোনায় ফিরছেন। তার জেরে ধাতুটির চাহিদা ও দাম বাড়ছে তরতরিয়ে।
গোল্ড প্রাইস ডটকমের তথ্যানুসারে, আজ সকালে বিশ্ব বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৯২৬ পাউন্ড, যা গতকালের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কম। গত ছয় মাসে সোনার দাম আউন্সপ্রতি বেড়েছে ২১৩ ডলার আর গত এক মাসে বেড়েছে প্রায় ১৩৯ ডলার।