ঘরোয়া আয়োজনের পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও অনলাইন থেকেও রান্না করা হাঁসের মাংস খাচ্ছেন অনেকে। গত অর্থ বছরে বাজার ছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার।
সরকারি হিসাবে, গত অর্থবছরে যে পরিমাণ হাঁস উৎপাদিত হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটির দাম ন্যূনতম ৩০০ টাকা ধরে হিসাব করলে বছরে হাঁসের বাজার দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায়। তবে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি হিসেবের চেয়েও দেশে হাঁসের উৎপাদন অনেক বেশি। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে হাঁসের মাংস ও ডিমের বাজারে দৃশ্যত বেশ বড় একটা পরিবর্তন এসেছে।
ঢাকার বাজারে এখন দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের প্রতিটি হাঁস বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়। এক কেজির বেশি ওজনের হাঁসের বাজারমূল্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। সুপারশপে ড্রেসিং করা প্রতি কেজি হাঁসের দাম ৫০০ টাকার বেশি।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে বাজারে হাঁসের মাংস ও ডিমের চাহিদা বেড়েছে। সারা বছরই কমবেশি হাঁস বেচাকেনা হয়। তবে হাঁসের মাংসের বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয় শীতের মৌসুমে। এ সময় বেচাকেনা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। শীতের মৌসুমে ঘরোয়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা শীতের পিঠার সঙ্গে খেতেও হাঁসের মাংসের চাহিদা বেশি থাকে।
এফডিসি–সংলগ্ন ঢাকা মহানগর হাঁস-মুরগি আড়ত সমবায় সমিতির সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতের মৌসুমে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার হাঁস বিক্রি হয় এফডিসি–সংলগ্ন এক বাজারেই। বিক্রির পরিমাণ প্রতিবছর বাড়ছে। অনেক ব্যবসায়ী তাই শীতের মৌসুমে মুরগি বদলে হাঁস বিক্রি করেন।’
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, হাওরাঞ্চলে হাঁস পালনের প্রবণতা আগে থেকেই ছিল। এখন সেটা বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে। কারণ, এখন হাঁস ও হাঁসের ডিমে ভালো দাম মিলছে। এবার ১ কেজি ৩০০ থেকে ১ কেজি ৭০০ গ্রামের একটা হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার বেশি। গত বছর একই ওজনের একটি হাঁস বিক্রি হয়েছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। এই কর্মকর্তা জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার হাঁসের খামার রয়েছে।
হাঁস ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, গত কয়েক বছরে শহরের হাঁসের মাংস তথা হাঁসের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বাড়তি এই প্রবণতা শুরু হয়েছে মূলত ২০১৫ সাল থেকে। বড় বড় শহরের সুপারশপগুলোও হাঁসের প্রাপ্যতা ও বিক্রিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ড্রেসিং করে রান্নার উপযোগী করে এসব সুপারশপে হাঁস বিক্রি করা হয়। কাটাকাটির ঝামেলা কম থাকায় তাই অনেকে হাঁস কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
সুপারশপ মিনা বাজারের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক (সাপ্লাই চেইন) নুরুল ইসলাম বলেন, আগে সুপার শপে শুধু শীতকালে হাঁস বা হাঁসের মাংস পাওয়া যেত। এখন সারা বছর বিক্রি হয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় শীতের সময়। বর্তমানে মীনাবাজারে প্রতিদিন কয়েক শ কেজি হাঁসের মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শুধু হাঁস নয়, বাজারে হাঁসের ডিমের চাহিদাও বেশি। হাঁসের ব্যবসা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিমের বাজারটিও বড় হয়েছে। কারণ, আগের তুলনায় এখন হাঁসের ডিম সহজেই মিলছে বাজারে।
কিশোরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালনের সঙ্গে যুক্ত আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘হাঁস পালনের জন্য হাওর খুব উপযোগী পরিবেশ। কারণ, প্রাকৃতিক উৎস থেকে সহজে খাবার পাওয়া যায়। এতে খাবার কম দিতে হয়। তাতে লাভ বেশি থাকে।
বাগেরহাটের আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘এ জেলায় বার্ষিক হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬০ হাজার। আমরা গত মাসেও পাঁচ হাজারের বেশি বাচ্চা উৎপাদন করে প্রতিটি ২০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আশা করছি, বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে।’