সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে চলে ছোটখাটো এসব ভোজের আয়োজন। যে আয়োজন পরে পরিণত হয় আড্ডায়। ক্যানটিন, বাদামতলা, ট্রান্সপোর্ট চত্বর, আমতলা, সাংবাদিক সমিতির বারান্দা, খেলার মাঠ, বকুলতলা, পিঠা চত্বর, নানির দোকান, ঝালমুড়ি চত্বরে গল্প আড্ডায় মেতে থাকে সবাই। কখনো আড্ডার ফাঁকে জমে ওঠে গানের আসর। গিটারের টুং টাং শব্দে তৈরি হয় রোমাঞ্চকর পরিবেশ। আর এ সবকিছুর মধ্যে অন্য মাত্রার জোগান দেয় মামার ঝালমুড়ি।
গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) ক্যাম্পাসের অন্যতম পরিচিত একটি মুখ হচ্ছেন মনির মামা, আমাদের হিটলার। গবির সবার প্রিয় ঝালমুড়ি মামা। যাঁর হাতের জাদুমাখা ঝালমুড়ির ঝাল নিতে ভিড় করে প্রায় সবাই। এতেই তৈরি হয় আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ। ঝালের উত্তাপ আর মুড়ি মজা কখন যে হাসিঠাট্টা আর খুঁনসুটিতে মিলিয়ে যায়, কেউ বুঝতে পারে না। এদিকে অন্য পাশে কেউ খায় ফুচকা, কেউ আবার খায় ভেলপুরি। কারও খাবার কেউ কেড়ে নিয়ে বাঁধিয়ে দেয় মারামারি। কেউ কেউ আবার আচারে ভাগ বসানো নিয়ে করে কাড়াকাড়ি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফেরদৌস সালেহীন নিয়ন বলেন, ‘সময়ে-অসময়ে হালকা ক্ষুধা মেটানোর জন্য মামার ঝালমুড়ি আমার প্রথম পছন্দ। কাগজের ঠোঙায় মোড়ানো মামার হাতের ১০ টাকার ঝালমুড়ির স্বাদ অন্য সব খাবারকে হার মানায়। ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের সঙ্গে ছুটে আসি মামার কাছে। খাওয়া শেষে সবাই ভাগাভাগি করে বিল দিই। এই অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়।’
লাকি আক্তার নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যাম্পাসে আসব, কিন্তু ফুচকা খাব না, তা কি হয় নাকি! ক্যাম্পাসজীবনের প্রাণ খুঁজে বেড়াই বন্ধুদের আড্ডায়। আর সেই আড্ডাকেই চাঙা করে তোলে এই প্রিয় ফুচকা। অনেক সময় ক্লাস না থাকলেও শুধু ফুচকা খেতেই ক্যাম্পাসে চলে আসি।
এদিকে শীতের তাপ হার মানে সুজিয়া খালার পিঠার উত্তাপের কাছে। ধোঁয়া বের হওয়া গরম পিঠায় দাঁত বসাতে তর সয় না যেন কারোই। শীর্তাত শিক্ষার্থীদের মুখের ধোঁয়াতে আড্ডার গরম যেন বাষ্পীভূত করে ঠান্ডাকেও। নানির দোকানে লাল চায়ের স্বাদ আর ক্যানটিনের শিঙাড়া, সমুচা মিলেমিশে তৈরি করে অন্য রকম আবেশ। যে আবেশে ভেসে যায় প্রাণবন্ত সময়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়জীবন। সবার পথ হবে আলাদা। কিন্তু মনের কোণে জমে থাকবে নিত্য অভ্যাসে পরিণত হওয়া এ আড্ডার স্মৃতি আর ১০ টাকার অনুভূতি।
*লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়