কেন এমনটি হলো? শিক্ষাবিদদের মতে, দারিদ্র্য ও করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। সরকার তাঁদের ধরে রাখতে কোনো চেষ্টা করেছে বলে জানা নেই। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মেয়েশিক্ষার্থী কমার অন্যতম কারণ বাল্যবিবাহ। অনেক অভিভাবক করোনাকালে মেয়ের পড়াশোনার খরচ বহন করতে না পেরে বিয়ে দিয়েছেন, যদিও ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হলে, সেটা আইনত দণ্ডনীয়।
উচ্চশিক্ষায় ছেলেশিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার অন্যতম কারণ শিক্ষার মানের ক্রমাবনতি। এমনিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে ঠিকমতো পাঠদান হয় না। করোনাকালে এটি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মারাত্মক সেশনজট সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা শেষ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা যখন দেখেছেন পড়াশোনা করেও চাকরি পাওয়া যায় না, তখন পাঠ গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। কেউ কেউ পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার কথা চিন্তা করে কোনো না কোনো পেশা বেছে নিয়েছেন এবং করোনার পর আর শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাননি।
ইউজিসির প্রতিবেদনে যে আড়াই লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা শিক্ষার প্রতি নীতিনির্ধারকদের ব্যর্থতা ও অমনোযোগিতার একটি চিত্র বটে। একজন শিক্ষার্থীও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়বে, সেটি কাম্য হতে পারে না। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া দুঃখজনক। এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে অনেক দেরিতে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক কলেজে সেই সুযোগও ছিল না। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার কারণ আর্থিক অসংগতি। অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি কিংবা খণ্ডকালীন কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন, যা করোনাকালে বন্ধ হয়ে যায়।
ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত, যে আড়াই লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে উচ্চশিক্ষায় নতুন শিক্ষার্থী আসবে, এ কথা ভেবে নীরব দর্শকের ভূমিকায় তারা থাকতে পারে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে, এমন বেসরকারি সংস্থার সহায়তাও তারা নিতে পারে। শিক্ষার্থীদের কেবল সংখ্যা হিসেবে দেখলে হবে না, তাঁদের দেখতে হবে দেশ ও সমাজের ভবিষ্যৎ হিসেবে। ভয়াবহ সেশনজট থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এই নেতিবাচক খবরের মধ্যেও যে ইতিবাচক তথ্য পাওয়া গেল, সেটি হলো করোনাকালে উচ্চশিক্ষায় মেয়েশিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া। আমাদের মেয়েরা যে কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই, এটা আবারও প্রমাণিত হলো।