রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে আম পাড়ার সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার বাগান থেকে আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়। সেই নির্দেশনা মোতাবেক পাকা আম নামানো শুরু করেছেন আমচাষিরা।
শুক্রবার রাজশাহী মহানগরীসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি এলাকায় বাগান ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমের মোকামগুলোতে বেচাকেনা তেমন জমেনি। তবে ভালো দাম আর ঝড়-বৃষ্টির ক্ষতি এড়াতে গুটি আম গাছ থেকে নামাতে চাষিদের ব্যস্ততা ভালোই ছিল।
মহানগরীর উপকণ্ঠ কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার একটি বাগান থেমে আম নামাচ্ছিলেন চাষি নাজমুল হাসান। তিনি জানান, এই মৌসুমে তিনি চারটি বাগান কিনেছেন। যেখানে আমের টার্গেট ছিল ৮০ থেকে ৯০ মণ। কিন্তু এই টার্গেট এবার পূরণ না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে আমের দাম ভালো আছে। ক্ষতির আশঙ্কা নেই। তবে বড় ঝড়-বৃষ্টি হলে লোকসান গুনতে হতে পারে।
তিনি বলেন, কাঁঠালবাড়িয়ার এই বাগানের গুটি জাতের চারটি গাছ থেকে আম নামিয়েছি। স্থানীয়ভাবে আমটির নাম ‘মেহের চড়া’। আমের সাইজ ছোট-বড় মিশিয়ে বিক্রি করেছি। এবার আমের সাইজ কিছুটা ছোট। প্রতিমণ ২ হাজার ৪০০ টাকা দামে বিক্রি করেছি। একইভাবে মহানগরীর খড়খড়ি, কাটাখালি, নওদাপাড়া এবং রায়পাড়া এলাকাতেও গাছ থেকে গুটিজাতের আম নামানো হয়েছে।
এদিকে মহানগরীর খুচরা বাজারে চড়া দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে বিভিন্ন নামের গুটি জাতের আম। শুক্রবার বিকালে মহানগরীর কোর্ট বাজার এলাকায় ফুটপাতে আমের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন আম ব্যবসায়ী আহাদ আলী।
তিনি জানান, বাজারে এখন পর্যন্ত দুটি গুটি জাতের আম এসেছে। মেহের চড়া ও বৈশাখী। দুটি আমই খেতে মিষ্টি। বিক্রিও ভালোই হচ্ছে। মেহের চড়া আম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা এবং বৈশাখী ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছিলেন এই ব্যবসায়ী।
রাজশাহীতে এবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১১ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। অর্থাৎ ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য ৪০ টাকা ধরে প্রায় ৯০১ কোটি মতো আম বেচাবিক্রির প্রত্যাশা করছে রাজশাহী কৃষি বিভাগ।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর, আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। যেখানে শুক্রবার থেকে গুটি আম নামানো যাবে বলে জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক।
এছাড়া ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা এবং রাণীপছন্দ, ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪, ১৫ জুলাই থেকে গৌরমতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানোর সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ক্রেতাদের বিষমুক্ত ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই তারিখ অনুযায়ী শুক্রবার থেকে আমচাষিরা গুটি জাতের আম নামাতে শুরু করেছেন। তবে বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে যদি আম পেকে যায় তবে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করে গাছ থেকে আম নামানো যাবে। কোনোভাবেই যেন অপরিপক্ব আমে কেমিকেল মিশিয়ে বাজারজাত করা না হয়, সে লক্ষ্যেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।