কথা ও ব্যথা-৪ ©
যুগে যুগে অনন্য সাহিত্য কীর্তির জন্য বিভিন্ন সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠন এবং রাষ্ট্র কর্তৃক কবি সাহিত্যিকগণ সম্মাননা সনদ ও পদকে ভূষিত হয়েছেন। যেমন কবিগুরু, বিদ্রোহী কবি, পল্লীকবি, কাব্যতীর্থ, কাব্যালংকার, একই ধারায় নোবেল পদক, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পদক, স্বাধীনতা দিবস পদকসহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিভিন্ন প্রথিতযশা গুণীজনের নামে প্রবর্তিত পদক ও সম্মাননা, যার একটা আর্থিক মূল্যও ছিলো। একজন সাহিত্যিকের জন্য এমন সব পদক, সম্মাননা অলংকার। এমন সব উপাধি যা তাঁদের নামেরই অংশ হয়ে গেছে সময়ে। জাগতিক লোভ, স্বার্থের উর্ধ্বে থাকা এমন সব সংসার বিবাগী কবি সাহিত্যিকদের প্রেম, দ্রোহ ও বেদনার রুক্ষ তেপান্তরে এ যেন একফোঁটা শীতলধারা। প্রযুক্তির কল্যাণে সৃষ্ট সুযোগ নিয়ে অধুনা জন্ম হয়েছে বেশ কিছু আচানক ভার্চুয়াল সাহিত্য সংগঠনের। এ সব সংগঠন সমুহের বেশিরভাগ সংগঠকদের না আছে সাহিত্য জ্ঞান, না আছে একাডেমিক যোগ্যতা। আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ থাকলেই কেউ শিক্ষিত হয়ে উঠে না, যদি তাঁর মানসিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরণ না ঘটে। প্রকৃতপক্ষে কারো সাংস্কৃতিক উত্তরণ না ঘটলে, কলেজ ইউনিভার্সিটির সনদ থাকলেও তাকে ঠিক শিক্ষিত বলা যায় না। আবার বর্ণমালার জ্ঞান না থাকলেও জীবন ও জগত থেকে অর্জিত জীবনবোধ সমৃদ্ধ মানুষকেও আমরা শিক্ষিত বলতে পারি। সাংস্কৃতিকভাবে অনোত্তোরিত ধারার কিছু মানুষ অর্থ ছিটিয়ে রঙের বাহার দেখিয়ে কবি সাহিত্যিকদের সম্মাননার লোভ দেখিয়ে ডেকে নেয়। আর দুঃখজনক সত্য এই যে, আমাদের অনেক কবি সাহিত্যিক লোভে পড়ে এ চাকচিক্যের ফাঁদে ঢুকে যান। তাদের দেয়া অখাদ্য সনদ সম্মাননায় মুগ্ধ হয়ে গদোগদো হন। একজন নগন্য সাহিত্যসেবী হিসাবে এত সব দেখেশুনে কুঞ্চিত হই। অথচ গুণমানে বিবেচিত হলে এ সব সনদ-সম্মাননা হতে পারতো আমাদের বিদগ্ধ সাহিত্যিকদের অলংকার। এমন একটা অবনমিত আবহে কারও পক্ষে এখন বিশুদ্ধ সাহিত্যসেবা কিংবা চর্চা সম্ভব হচ্ছে না। অস্তিত্বের সংকটে পড়ে নান্দনিক সাহিত্যচর্চার জায়গাগুলো সংকুচিত হয়েছে। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়ে ইঁদুর দৌড়ে শামিল প্রায় সবাই। আমি বা আমরা এর ব্যতিক্রম, এ দাবী করার সুযোগ এখন অতোটা নেই আর। সামগ্রিক অরাজকতার প্রেক্ষাপটে সৃষ্টি হয়েছে অন্য সমস্যা। ভূইপোঁড় সাহিত্য সংগঠন সমুহের মধ্যে ঢুকে পড়েছে কিছু লাফাঙ্গা পুরুষ ও নারী। সাহিত্য নয়, প্রেম নয়, কাম বাসনা চরিতার্থ করার জন্য এ সব নরনারী এ অঙ্গনে প্রবেশ করেছে সাহিত্যিকের ছদ্মবেশে। নিলজ্জের মতো অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে প্রকাশ করে কেউ, আবার তা নিয়ে ঢেডা বাজাতে থাকে অন্য একদল। একদল ভিতরে ঠনঠনা হওয়ায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না ওরা। অজান্তেই বেরিয়ে পড়ে ওদের আসল চরিত্র। এরা একে অন্যের চরিত্রহননে নেমে পড়ে কাছা খুলে। যারা একদিন পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসে ভর করেছে, সময়ে সেই নারী পুরুষ বিগড়ে গিয়ে বিশ্বাসহন্তা হয়ে তাদের ব্যক্তিগত মহুর্ত্যগুলোর রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে পরস্পরের চরিত্র হনন করছে। এরা কেউই মূলত কবি সাহিত্যিক না, ওরা খেলেরাম, লাফাঙ্গা বদমাস। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী মানুষ এদেরকে তোষণ করে সাহিত্যাঙ্গনে স্থান করে দেওয়ায় এ অঙ্গনটাই কলুষিত হচ্ছে। এমন একটা দুষিত আবহে এ অঙ্গনের একজন বলে নিজেরাও সামাজিকভাবে পরিবার স্বজনের কাছে অবনমিত হচ্ছি। নিজেদের সম্মানের স্বার্থে এদের চিহ্নিত করে ঝেটিয়ে বিদায় করে সাহিত্যের এ অঙ্গঙ্কে কলুষমুক্ত করা সময়ের দাবী। সোচ্চার হোন অসম্মানের বিরুদ্ধে, সম্মান দিন, সম্মান নিন। এক ক্ষুদে কলমযোদ্ধার মনের গভীর বেদনা নিয়েই লিখছি ব্যর্থতা আর হতাশার এই গ্লানিকর স্বীকারোক্তি। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। পৃথিবী বদলে গেছে, লাগে কি তিক্ত মধুর, তুমি আমি যাইনি বদলে, পারছি না তা বলতে। ফারুক জাহাঙ্গীর- প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, বাংলা কবিতাঙ্গন- সাহিত্যের সূর্যোদয়।