ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বসতবাড়িতে পাকা দালান নির্মাণকাজ প্রায় দুই বছরেও সম্পন্ন হয়নি। ঠিকাদারদের গাফলতির কারণে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের এ কাজ আটকে আছে বলে জানা গেছে।
এতে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা চরম বিপাকে পড়েছে । এ অবস্থায় তারা এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এসব আবাসন নির্মাণকাজের ঠিকাদার উপজেলার ‘জয় ট্রেডার্সে’র স্বত্বাধিকারী আ. কুদ্দুস ওরফে ভিপি কুদ্দুস। প্রায় দুই বছর আগে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বসতবাড়িতে পাকা দালান নির্মাণের নামে প্রকল্পের অর্ধেক কাজ করেই সরকারি বিল উঠিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো হলো- উপজেলা সদর ইউনিয়নের কে.এম ডাঙ্গী গ্রামের শেখ আ. মান্নান, একই গ্রামের মৃত আ. জলিল মাষ্টার, আ. জলিল খান, চরহরিরামপুর ইউনিয়নের জাকেরের সুরা গ্রামর মোসলেম উদ্দিন খান ও বি এস ডাঙ্গী গ্রামের আমিন উদ্দিন মোল্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ত্রাণ ও দুর্যোগ অধিদপ্তর ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১৬টি অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে আবাসন নির্মাণের জন্য একতলা পাকা দালানের কাজ শুরু হয়। প্রতিটি পরিবারে সরকারিভাবে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকাদারের মাধ্যমে ১১টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের আবাসন নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঠিকাদার ভিপি কুদ্দুস টেন্ডারের আওতায় পাঁচটি আবাসন নির্মাণের কাজ প্রায় দুই বছরেও শেষ হয়নি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার আ. কুদ্দুস ওরফে ভিপি কুদ্দুস জানান, ‘বর্তমানে আমি আর্থিক সংকট রয়েছি। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি। ২৭ লাখ টাকা বিল উঠালেও তা আমার পার্টনার নিয়ে গেছে। ফলে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করতে আরও কিছুদিন সময় দিতে হবে।’
ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো জানায়, প্রতিটি ঘরের ফ্লোর, দরজা, জানালা, গোসলখানা, বাথরুম, টাইলস, বিদ্যুৎ ওয়ারিং কাজ, চুনকাম ও স্যানিটেশন কাজগুলো এখনো শেষ হয়নি।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আ. মান্নান (৭০) জানান, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সাতটি মেয়েসহ আমরা নয়জন। দিনের বেলায় বসতবাড়িতে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটাই। কিন্তু রাত হলেই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে রাত্রীযাপন করতে হচ্ছে। ঠিকাদার ভিপি কুদ্দুসের জন্য প্রায় দুই বছর ধরে আমরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।’
তিনি জানান, ‘প্রশাসনকে বারবার জানানোর পরও কেউ আমাদের খবর রাখেনি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (পিআইও) মাহমুদুল হাসান টিটু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আবাস নির্মাণে বিড়ম্বনার দায় উল্লেখ করে ঠিকাদার ভিপি কুদ্দুসকে তিন দফায় নোটিশ/চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও সে সজাগ না হলে ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মেহেদী মোর্শেদ বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় আসার অনেক আগেই বীর নিবাসের টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু পরে জানতে পারি, মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ওই ঠিকাদার কিছু বিল এখনো না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে পারেননি। তারপরও ওই ৫ বীর নিবাসের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে কাজ করছি আমরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন এ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’