গত কয়েক দিন ধরেই লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে ও বেড়িবাঁধের দুই পাশে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে এসব এলাকার পথঘাট ও ফসলি মাঠ। ফলে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চর এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। শীতের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
সন্ধ্যার পরই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় হাটবাজার, সড়কে কমছে জন সাধারণের চলাচল। এদিকে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্ট পাচ্ছেন চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষ।
এদিকে সরকারিভাবে সাড়ে চার হাজার কম্বল উপজেলার জন্য আসলেও তা কয়েকদিন পরই বিতরণ করা হবে বলে জানান রায়পুরের ইউএনও নাজমা বিনতে আমিন।
সরজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিন ধরেই রাত ৯টার পর থেকেই ঘন কুয়াশা পড়তে শুরু করে এসব চরাঞ্চলে। কুয়াশার প্রকোপ থাকে সকাল ৯টা পর্যন্ত। ভোরের দিকে কুয়াশার কারণে ঢাকা পড়ছে আঞ্চলিক ও স্থানীয় সড়ক। সকাল থেকেই তুলনামূলক যান চলাচল কম থাকছে সড়কে। তৃণমূল পর্যায়ের হাটবাজারে ভোরের দিকে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে ক্রেতাদের উপস্থিতি থাকে না বললেই চলে। শীতের তীব্রতায় দুর্ভোগে রয়েছেন বয়স্ক ও শিশুরা। শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে। এতে বয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যাও হাসপাতাল এ বাড়ছে বলে ডাক্তার জানান।
মেঘনা নদী সংলগ্ন চরকাছিয়া আশ্রায়কেন্দ্রের বাসিন্দা দিনমজুর মাহমুদ আলী ও জুলহাস মোল্লা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে নদীর পাড়ে অনেক শীত পড়ছে। ঠান্ডার কারণে সকাল- বিকেলে কৃষিকাজ করতে কষ্ট হচ্ছে।
আলতাফ মাস্টারের মাছ ঘাট এলাকার আবদুল হামিদ ও গোপরান মাঝি বলেন, শীতের কারণে নদীতে অন্য মাছ ধরতেও কষ্ট হয়। দিনেও অনেক বেলা পর্যন্ত কুয়াশা থাকে। তা ছাড়া অনুদান হিসেবে এখনো সরকারি কম্বল পাই নাই। সরকারি যে কম্বল দেওয়া হয়, তাতে চরাঞ্চল মানুষের শীত নিবারণ হয় না।
ইজিবাইক চালক নাসিরুল গাজি ও হারুন বলেন, কুয়াশার কারণে সকালে রাস্তায় কিছুই দেখা যায় না। ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়। বর্তমানে অতিরিক্ত গরম কাপড় পরতে হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্র জানা যায়, চলতি শীত মৌসুমে সরকারিভাবে এ পর্যন্ত উপজেলায় সারে চার হাজার কম্বল এসেছে। ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়নি। কয়েক দিন পর শীত বস্ত্রগুলো ইউনিয়ন ভিত্তিক চেয়ারম্যানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।
এখন পর্যন্ত উপজেলার কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষ থেকেও শীতার্থদের শীতবস্ত্র দেওয়া হয়নি। রায়পুর উত্তর চরবংশী, দক্ষিণ চরবংশী ও উত্তর চরআবাবিল ইউপির মেঘনা নদীর ওপারে বিশাল চরাঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার দিনমজুর-কৃষক পরিবার বসবাস করেন।
শীতের সময় বেশি কষ্ট পাওয়া মানুষের বসবাস উপজেলার চরকাছিয়া, চরজালিয়া, চরলক্ষ্মী, চরপক্ষি, চরইন্দ্রুরিয়া, চরপাঙ্গাসিয়া, চর পাগলা, চর মোহনা, চরআবাবিল, চরবংশী, মোল্লারহাট, মিয়ারহাট, চারঘাসিয়া, খাসেরহাট, বেরিবাঁধ সড়কের ফিশারিঘাট, হায়দরগঞ্জ, নতুনব্রিজ, বটতুলি, আখনবাজার গ্রামগুলোতে।
উপজেলার শহর এলাকার স্বেচ্ছাসেবী পাওয়ার অব ইউথের প্রতিষ্ঠাতা নাসির আল ইমরান বলেন, আমরা সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্থানীয় হতদরিদ্র পরিবারে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আমাদের সাথে কয়েকটি সংগঠনও কম্বল বিতরণ করবে।
রায়পুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল দে জানান, ভোরে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর-ভোলা- চাঁদপুর-চট্রগ্রাম ও ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রচুর কুয়াশা থাকে। ভোরে যানবাহন কম চলাচলের পাশাপাশি হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলে। হাইওয়ের একাধিক স্থানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, সরকারিভাবে সারে চার হাজার শীতবস্ত্র কম্বল আসছে এ উপজেলায়। সংসদ নির্বাচনের কারণে তা বিতরণ বন্ধ ছিল। অনুমতি দেওয়া হলে ২-১ দিনের মধ্যে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে এই শীতবস্ত্র দেওয়া হবে।