জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার পদে রদবদল করা হয়। নতুন পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী। জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে এটাই ছিল তার প্রথম পদায়ন। ফলে নতুন কর্মস্থলে নির্বাচনের মাত্র ২৪ দিন পূর্বে এই যোগদান ছিল চ্যালেঞ্জের। বিশেষ করে বিরোধী দলের বর্জন এবং সহিংস কর্মসূচির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের ছিল। যোগদান করে মাস না পেরোতেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলতা আনলেন সাতক্ষীরার নবাগত এই পুলিশ সুপার।
১৮ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে নবাগত পুলিশ সুপার বলেছিলেন, আমি একটা স্বপ্ন নিয়ে এসেছি। আমাকে একটা নিদিষ্ঠ লক্ষ্য পূরণের জন্য এখানে পাঠানো হয়েছে।
নবাগত পুলিশ সুপার আরও বলেছিলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ বদ্ধপরিকর। ভোটারদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান ও ভোটাররা যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সে জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোনো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বলা যায়, অতিতের যে ১১টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেগুলোর চেয়ে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ হয়েছে এবারের নির্বাচন। যদিও এ কৃতিত্ব শুধু পুলিশের নয়। কারণ নির্বাচনের সাথে যুক্ত ছিল সরকারের আরও বিভিন্ন দপ্তর এবং আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা। রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিন্ট্রেট, জেলা নির্বাচন অফিস, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, আনসারসহ অন্যান্য দপ্তরের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে করা হয়নি।
সব জল্পনা-কল্পনায় শেষ হলো গত ৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় শান্তিপূর্ণভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সাতক্ষীরায় একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। এই নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা সাতক্ষীরা জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকীর স্বপ্ন বাস্তাবায়নে সহায়ক হবে বলে সাতক্ষীরাবাসী মনে করেন।
সাতক্ষীরা-১ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ফিরোজ আহমেদ স্বপন বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের যে ভূমিকা রেখেছেন তা সাতক্ষীরাবাসী মনে রাখবেন। আমরা সরকারি দলের প্রার্থী হয়েও স্পেশালভাবে পুলিশের থেকে কোনো প্রকার সুযোগ সুবিধা নিতে পারিনি।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মতিউর রহমান সিদ্দিকী বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করতে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আমাকে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়। নবাগত পুলিশ সুপার হিসেবে আমি যোগদানের পর থেকেই জেলা পুলিশের সকল সদস্যকে নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেয়ার চেষ্টা করেছি। তা ছাড়া একটি পক্ষ নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে নির্বাচনের আগে এবং পরে বিভিন্নভাবে নাশকতা করার চেষ্টা করেছে। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের সকল সদস্যের তৎপরতার কারণে তারা সেই লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি।