নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ৬ প্রার্থী। ছবি : সংগৃহীত
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বগুড়া-৪ আসনে গণসংযোগে তৎপর হয়েছেন প্রার্থীরা। তারা ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। রশিতে ঝুলছে নির্বাচনী পোস্টার। শহরে আর গ্রামীণ বাজারে ঝটিকা প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ৬ প্রার্থী।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জাসদ নেতা একেএম রেজাউল করিম তানসেন এমপি (নৌকা), বাংলাদেশ কংগ্রেস জোটের প্রার্থী আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল হোসেন হিরো আলম (ডাব), জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক (লাঙ্গল), আওয়ামী লীগের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল ইসলাম মেঘ (কবুতর), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক সাংসদ ডা. জিয়াউল হক মোল্লা (ঈগল) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশফিকুর রহমান কাজল (ট্রাক)। নন্দীগ্রাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা ও কাহালু উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে বগুড়া-৪ আসন গঠিত। এখানকার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৪।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীরা গ্রামে ঢুকছেন না, ভোটারদের বাড়িতেও যাচ্ছেন না। তারা শহর এবং গ্রামীণ বাজারগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ঝটিকা প্রচার করছেন। নৌকার প্রার্থী বর্তমান সাংসদ রেজাউল করিম তানসেনের পাশে নেই এখানকার আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতারা। নৌকায় ভোট চাওয়ায় এবং দলের প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী সভায় অংশ নেওয়ায় নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে অব্যাহতি ও চার নেতাকে তলব করার অভিযোগ ওঠায় বিভ্রান্তিতে পড়েছে তৃণমূলের কর্মীরা। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নৌকা ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক নেতা ডা. জিয়াউল হক মোল্লার পক্ষে ঈগল প্রতীকের প্রকাশ্য প্রচার চালাচ্ছেন। ওই প্রার্থীর সঙ্গে নির্বাচনী অফিসে আলোচনায় বসা আওয়ামী লীগ নেতার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করে তৃণমূল কর্মীরা লিখেছেন ‘খিদের পেটে বাঘেও ঘাস খায়।’
ক্ষমতাসীন দলের সংগঠনে চেইন অব কমান্ড না থাকায় তৃণমূলের কর্মীরা বিপাকে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন। তবে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে ভোটারদের কাছে গিয়ে নৌকায় ভোট চেয়ে গণসংযোগ করছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম ও নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি বকুল হোসেনসহ নেতাকর্মীরা।
নৌকার প্রার্থী অভিযোগ করেন, নির্বাচনের সময় নৌকার পক্ষে কাজ করায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ ৬ জন নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে কৈফিয়ত তলব করেছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। এ কারণে তৃণমূলের কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
এদিকে নৌকা প্রাতীকের সঙ্গে ভোটের মাঠে টক্কর দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে ডাব প্রতীক নিয়ে প্রচারে সরব রয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আশরাফুল হোসেন হিরো আলম। তিনি শহর-বাজারে যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই সেলফি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এই আসনের উপ-নির্বাচনে একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিরো আলম। ভোটযুদ্ধে রেকর্ড গড়েও মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে তীরে এসে এই প্রার্থীর তরি ডুবে যায়। ওই নির্বাচনে জাসদের রেজাউল করিম তানসেন এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তানসেন এমপির মুখোমুখি হয়েছেন হিরো আলম। এছাড়া দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাহীন মোস্তফা কামাল ফারুক। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনিও ঝটিকা প্রচার চালাচ্ছেন। গণতন্ত্রী পার্টির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মনজুরুল ইসলাম মেঘ (কবুতর) তার পোস্টারে নির্বাচনী অঙ্গীকার উল্লেখ করে কৌশলী প্রচার করছেন। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশফিকুর রহমান কাজল (ট্রাক) প্রচারে কৌশলী।
ভোটের প্রচারের সময় অভিযোগ ওঠে, নন্দীগ্রাম উপজেলার মুরাদপুর বাজারে এবং কাহালু বাজার এলাকায় হিরো আলম ও তার কর্মীদের ওপর হামলা করে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা। হামলায় তার কয়েকজন কর্মী আহত হন। কাহালু উপজেলার তিনদীঘি এলাকায় গণসংযোগকালে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির সাবেক সাংসদ ডা. জিয়াউল হক মোল্লার ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।