লালমনিরহাট জেলা কারাগারে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীর সঙ্গে আসামির বিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশে আট লাখ টাকা দেনমোহরে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় লালমনিরহাট জেল সুপার উমর ফারুক বলেন, দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও আপিল বিভাগ থেকে আসামি মুক্তির নির্দেশের কাগজপত্র এখনো জেলা কারাগারে আসেনি। কাগজপত্র এলেই তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
এরআগে গত ২৯ নভেম্বর লালমনিরহাট জেলা কারাগারে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় আসামিকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গত ৪ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী ও আসামির বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ওই কিশোরীকে অপহরণ করেন একই এলাকার রকিবুজ্জামান রকিব (২৬) নামের এক যুবক। পরে ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে রকিবের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একইদিন অপহরণের শিকার হওয়া কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং রকিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে মেডিকেল পরীক্ষায় ওই কিশোরী গর্ভবতী বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এ মামলায় গত জুন মাসে আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আসামি রকিবুজ্জামান রকিবের জামিন স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগ পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। এরমধ্যে জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে আসামি পক্ষও।
শুনানিতে আসামিপক্ষ লিখিতভাবে আদালতকে জানায়, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ের ব্যবস্থা করতে উভয় পক্ষ রাজি হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগীকে বিয়ের শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করা হয়।
শুনানিতে উপস্থিত থাকা ভুক্তভোগীর বাবা আপিল বিভাগকে জানান, তার মেয়েও বিয়ে করতে আগ্রহী। পরে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করেন জেল সুপার উমর ফারুক। পরে ৪ ডিসেম্বর কারাগারে থাকা আসামির জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
আসামির বাবা বলেন, ‘আমার ছেলে ভুল করেছে। তাই মেয়ের পরিবারের সঙ্গে বসে আপস মীমাংসা করে এ বিয়েতে সম্মত হই। আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতেই আমরা খুশি।’
লালমনিরহাট জেলা কাজি সমিতির সভাপতি আমজাদ হুসাইন সরকার বলেন, আদালতের আদেশে কারাগারে আট লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এসময় দুই পরিবারের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।।