মহাস্থান নিউজ:
ডিমের দাম আরো বেড়েছে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির বাদামি ডিমের হালিতে পাঁচ টাকা বেড়ে রাজধানীর খুচরা বাজারে তা ৬০ টাকায় ঠেকেছে, যা রীতিমতো রেকর্ড। তবে বাজারগুলোতে দরদাম করে এক ডজন ডিম কিনলে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে দাম আরো বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী ডিমের সরবরাহ না থাকার কারণেই দাম বাড়ছে। এছাড়া বাজারে মাছ, মাংসের পাশাপাশি সবজির দাম চড়া। তাই চাপ পড়েছে ডিমের ওপর। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিমের দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে স্বল্প আয়ের মানুষ। কারণ ডিমের দামে মাছ বা মাংস কোনোটাই কেনা সম্ভব নয়। তাই স্বল্প আয়ের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে বড় ভরসার জায়গা ডিম। কিন্তু এখন তা-ও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পোলট্রি খাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় সরকারি তদারকি না থাকায় তাদের আধিপত্য বেড়েছে, যার খেসারত দিচ্ছে জনগণ। এই করপোরেট সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে ডিমের দাম আরো বাড়বে। সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির আরেক কারণ প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া। এ কারণে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। এ খাতের বড় সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খোন্দকার মো. মহসিন ইত্তেফাককে বলেন, গত কিছুদিনে প্রচণ্ড গরমে খামারে অনেক মুরগি মারা গেছে। ফলে ডিমের উত্পাদনে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, আগামী অক্টোবরের আগে এই ঘাটতি পূরণ হবে না। এছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পোলট্রি ফিডসহ অন্যান্য সব খরচ বেড়ে যাওয়ার ফলে উত্পাদনের খরচ অনেক বেড়েছে। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা টিকতে না পেরে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারের বিপনন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশে (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা। গত এক বছরে প্রতি হালি ফার্মের বাদামি ডিমের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মুরগির ডিমের হালির গড় দাম ছিল ২৭ টাকার আশপাশে। এখন তা ৬০ টাকায় ঠেকেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে এটা শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের সব দেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ডিম, মুরগি, পেঁয়াজ কিংবা কাঁচা মরিচের দাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেথ সংশ্লিষ্ট নয়। এসব পণ্যের উত্পাদন, চাহিদা অন্য দুটি মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকে। কিন্তু যে কোনো পণ্যের দাম বাড়লেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়। এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে ডিমের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, সবজি ও মাছের দামও বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আলু ৪০ টাকা, কাঁঁচা মরিচ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর টম্যাটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। কাঁচ কলার হালি ৪০ টাকা। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় উঠেছে। আমদানি করা পেঁয়াজর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম বেশ চড়া। বাজারে ৬০০ বা ৭০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। আর এক কেজি বা তারও বেশি ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। সস্তা মাছের মধ্যে তেলাপিয়া, পাঙাশের কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, যা গত বছর ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।