মহাস্থান নিউজ:
পাবনা-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) শেখ রাসেল আলী মাসুদ (ভিপি মাসুদ) ও তার স্ত্রী নাছরিন আক্তারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক।
শেখ রাসেল আলী মাসুদ ওরফে ভিপি মাসুদ পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং তার স্ত্রী নাছরিন আক্তার পাবনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে চাকরি করেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন পাবনার সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. খাইরুল হক বাদী হয়ে পৃথক এ মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৮ ও ৯, তারিখ ১৯ জুলাই ২০২৩ ইং। দুদক পাবনা কার্যালয়ে এ মামলা দুটি করা হয়।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, পাবনা সদরের রামচন্দ্রপুর মহল্লার আব্দুল করিমের ছেলে শেখ রাসেল আলী মাসুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয় দুদক থেকে। গত ৩ এপ্রিল সম্পদ বিবরণী দাখিলের আদেশ দেয়া হয়। ৪ এপ্রিল তিনি সম্পদ বিবরণী ফরম স্বাক্ষরসহ উত্তোলন করলেও পরবর্তীতে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (বিবরণী গ্রহণের ২১ দিনের মধ্যে) দাখিল করেননি।
দুদকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে তার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদের তথ্য। তার সার্বিক আয় অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৯ টাকার স্থাবর ও ৪১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪২ টাকার অস্থাবর সহ মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৮ টাকার সম্পদের সন্ধান পায় দুদক। তিনি বিভিন্ন সময় মোট ২৮ লাখ ২৩ হাজার ৮০৬ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৩৮ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮৪ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ১ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ৭০৫ টাকা। সবমিলিয়ে তার ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭৯ টাকা জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
অপরদিকে শেখ রাসেল আলী মাসুদের স্ত্রী পাবনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিএইচসিপি নাছরিন আক্তার দুদকের জারীকৃত সম্পদ বিবরণী ফরম উত্তোলন করলেও কমিশনে দাখিল না করে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত ২৭ লাখ ২ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন পূর্বক ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাকেও একই তারিখে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারী করা হয়। তিনি ৪ এপ্রিল সম্পদ বিবরণী ফর্মসহ আদেশটি স্বাক্ষরপূর্বক গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থাৎ বিবরণী গ্রহণের ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণটি কমিশনের দাখিল না করে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদক সমন্বিত কার্যালয় পাবনার উপ-পরিচালক মো. খাইরুল হক বলেন, তারা উভয়েই জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখে এবং এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
খাইরুল হক বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসে তাদের স্বামী-স্ত্রীর জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অপরাধ প্রতিয়মান হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ রাসেল আলী মাসুদ বলেন, আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে বরাবরই একটি মহল বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। দুদকের মামলাও তার অংশ। আমি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবো।
দুদকের সঙ্গে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কিসের জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, আমাকে গত ৬ বছর ধরে একটি মহল দুদকসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে।
সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি কেন এমন প্রশ্নেন জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিবরণী দিয়েছি। কিন্তু তারা মামলা করবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আইগতভাবে মামলা মোকাবিলা করবো।