মহাস্থান নিউজ:
পুলিশের মাধ্যমে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে বগুড়ার ইয়াকুবিয়া স্কুলের ছাত্রীদের শ্বাসরূদ্ধ করার প্রচেষ্টা আওয়ামী লীগ চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন। দলের পক্ষে কেন্দ্রীয় ব্রিফিংয়ে অংশ হিসেবে রিজভী বগুড়ায় সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন।
এ সময় রিজভী অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী চেতনার পুলিশকে লেলিয়ে দিচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে। আজকে বগুড়ার তাণ্ডব ভয়াবহ। আজকে বগুড়ার তাণ্ডব নজিরবিহীন। শত শত নেতাকর্মি আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কও তাদের মধ্যে রয়েছে। তারা এতো বড় কাপুরুষ নীরিহ মাসুম বাচ্চা মেয়েদেরকে পর্যন্ত তারা ছাড়েনি। অসংখ্য টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে ইয়াকুবিয়া স্কুলের ছাত্রীদের শ্বাসরূদ্ধ করার প্রচেষ্টা তারা চালিয়েছে। তারা (আওয়ামী লীগ) দম বন্ধ করার অবস্থায় নিয়ে এসেছে।’
বিএনপির এই নেতা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যের মধ্যে কখনো গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ছিল না। যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে, গণতন্ত্রের নামে; এসেই তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সব দল বন্ধ করে তারা একদল করেছে। মানুষের ভিন্নমত প্রকাশের অধিকারকে তারা বন্ধ করেছে। শুধুমাত্র ওরাই কথা বলবে। আর কেউ কথা বলবে না। আজকে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হয়েছে ১৯৭৫ এর বাকশালের পর। নতুন কায়দায়, নতুন আঙ্গিকে তারা সেই বাকশাল কায়েক করছে।’
রুহুল কবির বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীকে সাথে নিয়ে পুলিশ আজ যে নারকীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে তার নমুনা দেই। আমি কেন্দ্রীয় কমিটির ব্রিফিং হিসেবে লক্ষ্মীপুরে পদযাত্রা চলাকালে চোরাগুপ্তার ফাঁদে ফেলে কৃষক দলের সজিব হোসেনকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সভাপতি মহসিন কবির সাগর ও নেওয়াজের নেতৃত্বে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিন শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। আরও দু একজনের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন। কতজন যে মারা যাবে তার বলা কঠিন।
খাগড়াছড়িতে পদযাত্রায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি বর্ষণ করলে ২ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ ৫০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
বগুড়ায় পদযাত্রায় হামলা চালিয়ে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়েছে দাবি করে রিজভী আরও বলেন, টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় কারণে ইয়াকুবিয়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমাদের কাছে সব ছবি আছে, ভিডিও আছে। আপনারা চাইলে দেখাতে পারব। কিশোরগঞ্জের পদযাত্রায় জেলা শহরের ঈশা খাঁ রোডে পুলিশ বেপরোয়া হামলায় দেড় শতাধিক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়।
রুহুল কবির বলেন, চারটার দিকে রাজশাহী পদযাত্রার যাওয়ার পথে যমুনা ব্রিজ পার হওয়ার সময় আমি বগুড়ায় এক নারকীয় ঘটনার কথা শুনি। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিই পদযাত্রা শেষে করেই বগুড়ায় আহত নেতা-কর্মীদের দেখতে আসবো। এরপর আসতে আসতে সারাদেশের নারকীয় ঘটনার জানতে পারি। সারাদেশে যে পৈশাচিক বর্বরতা চালিয়েছে, আজকের বগুড়ার নারকীয় ঘটনার সাথে আরও লোমহর্ষক ঘটনা যুক্ত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, আজকে শেখ হাসিনার বিভৎস রুপের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে তার প্রতি খুন, গুম সমালোচনা হচ্ছে। তিনি যে ২০১৪ ও ২০১৮ প্রহসনের নির্বাচন করেছে, তামাশার নির্বাচন দিয়েছে সেটা গোটা বিশ^ জানে। এই ব্যাপারে গোটা বিশ^ সোচ্চার হচ্ছে। তাই শেখ হাসিনা সমস্ত কিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলছে।
ঢাকার উপনির্বাচন প্রসঙ্গে রুহুল কবির বলেন, আজকে হিরো আলম, কি বলব একটা গরীব ছেলে, অল্প শিক্ষিত ছেলে নির্বাচন করেছে। এরা কত বড় কাপুরুষ হতে পারে। আরাফাত আওয়ামী লীগের ক্যান্ডিডেট, এটা তো প্রহসনের নির্বাচন। কেউ যায়নি ভোট দিতে। আমাকে ঢাকা কোর্টের একজন আইনজীবী বলে-আমরা আসার সময় বনানীর একটা সেন্টারে তিনটি কুকুর শুয়ে আছে।
‘আত্মা বিক্রি করে দেয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল, হাসিনার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কী বলে দিবে সেটাই উনি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিবেন। যেখানে জনগণের ভোটের নির্বাচন হয় না। সেখানেও হিরো আলমের মতো ছেলেকে বর্বরচিত হামলা করে। আগামী জাতীয় নির্বাচন যদি হয়, তার রুপ কী হতে পারে এইটা তার নমুনা। তাই একদফা আন্দোলন।
এই আন্দোলন চলবে ঘোষণা দিয়ে রুহুল কবির বলেন, ‘হয়তো আরও হত্যা হবে। পদ্মা মেঘনা যমুনা ধলেশ্বরী, করতোয়ায় হয়তো আরও রক্তের স্রোত বয়ে যাবে। তারপরেও শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, এর কোনো ব্যতয় ঘটবে না।’
তিনি জানান, আজকে বগুড়ায় যে নারকীয় কাণ্ড ঘটিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের হত্যাসহ দেশের সব জায়গায় যে হামলা হয়েছে তার জন্য ঘৃণা নিন্দা জানাচ্ছি। সজিব যে নিহত হয়েছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
আমাদের কাছে পাওয়া খবরে সারাদেশে বিএনপির অন্তত ২ হাজার নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। নিহত একজন, নাম সজিব হোসেন। আর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক হাজার জন।
এ সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর তালুকদার হেনাসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।