মহাস্থান নিউজ:
আমের রাজধানী নামে খ্যাত কানসাটসহ শিবগঞ্জের বিভিন্ন আমের বাজারে আমের ওজন নিয়ে চলছে নৈরাজ্যের উৎসব। প্রতি মণ ধরা হচ্ছে ৫৫ কেজি আম। প্রতিনিয়ত আম ব্যবসায়ী ও চাষীরা প্রতারিত হচ্ছে। প্রশাসনের ভাষ্য হলো এটি প্রথায় পরিণত হয়েছে। তাই এটি রোধ সহজ নয়। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
কানসাটের শ্যামপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের আম ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জানান, আম বিক্রি করতে এসে আড়তদাররা যা করছে তা একেবারে ডাকাতির সামিল। বিভিন্ন কৌশলে ওজনে মণ প্রতি ৫৫ কেজি করে নিচ্ছে। তার উপর আবার কাঁটাওয়ালা (যারা ওজন করে) মণ প্রতি দুইটা করে, মহরাল (যারা লিখে রাখে) দুইটা করে ও শ্রমিকেরা মণ প্রতি দুইটা করে নিচ্ছে। এ ছয়টি আমের ওজন প্রায় আড়াই থেকে তিন কেজি। শুধু তাই নয়, রাস্তায় কয়েক স্থানে জোর করে ডালি হতে একটি বা দুইটি করে আম তুলে নিচ্ছে, হিজড়া, ডোম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নামে। সব মিলিয়ে কানসাট বাজারে এক মণ আম বিক্রি করতে হলে প্রকৃতভাবে আমের প্রয়োজন হচ্ছে প্রায় ৬০ কেজি দিতে হচ্ছে।
একই কথা বললেন কানসাট এলাকার আনারুল ইসলাম, কানসাট কলেজ পাড়ার একরামুল হক, শাহাবাজপুর নয়াগা গ্রামের হুমায়ুন আলী, পারদিলালপুর গ্রামের দুরুল হক মুসলিপুর গ্রামের একরামুল হক, সোনামসজিদ এলাকার ইসমাইল হক, কানসাট কলাবাড়ি গ্রামের সাইদুল ইসলাম মুসলিমপুর গ্রামের বকুল ইসলাম, মনাকষা ইউনিয়নের শুকুদ্দি মন্ডলসহ শত শত আম ব্যবসায়ী ও চাষীর একই অভিযোগ।
কানসাট বাজারে এক মণ আম বিক্রি করতে হলে প্রকৃতভাবে আমের প্রয়োজন প্রায় ৬০ কেজি।
বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী ও আম উদ্যোক্তা ইসমাইল হক শামীম খান বলেন, ওজনের ক্ষেত্রে যে আম বেশি নেওয়া হচ্ছে তা মূলত চাষীদের লোসকান হচ্ছে। কারণ কোনো আম ব্যবসায়ী আম ক্রয় করার সময় ওজনে ৫৫ কেজি নিচ্ছে। আবার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষীরা কানসাট আম বাজারে ঢুকার আগেই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা রাস্তাতেই আম ক্রয় করে নিচ্ছে।
তিনি বলেন, আম চাষীরা এক মণ আম উৎপাদন করতে প্যাকেট ছাড়াই ৪০ কেজিতে মণ ধরে প্রায় ৫শ টাকা খরচ করে। সে আম বিক্রি করার সময় যদি ৫৫ কেজিতে মণ ধরে বিক্রি করতে হয় তাহলে তাদের খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ছয়শ টাকা। প্যাকেট করা আম উৎপাদনে খরচ আরো বেশি। ৫৫ কেজি আম উৎপাদনে খরচ হবে প্রায় ১৪শ টাকা। কাজেই ওজনের ক্ষেত্রে একটা সমাধান হওয়া উচিত।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সভায় আমরা কয়েকবার এ সমস্যা সমাধানে দাবি করেছি। তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।
কানসাট আম আড়তদার সমিটির সাধারণ সম্পাদক উমর ফারুক টিপু বলেন, ওজনে বেশি নেওয়া আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বড় ব্যাপারীর কাছে। তারা আম ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে বাধ্য করে ৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম নিচ্ছে। এখানে আম আড়তদারদের কোনো কিছু করার নেই। তবে আমাদেরও দাবি এ প্রতারণা থেকে আম ব্যবসায়ী ও চাষীদের উদ্ধার করা হোক।
শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষি বিদ শরিফুল ইসলাম জানান, আম চাষী ও আম ব্যবসায়ীরা ওজনের ক্ষেত্রে প্রতারণা শিকার হচ্ছে। কিন্ত কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কিছু করার নেই। এটি করবে স্থানীয় সরকার প্রশাসন। তবে উপজেলা পরিষদেরর সমন্বয কমিটির সভাতে বার বার তুলে ধরেছি। আমি আবারো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করবো সুষ্ঠু সমাধানের জন্য।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত বলেন, এটি শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় নয়, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলাতেও ৫৫ কেজিতে মণ ধরে আম কেনাবেচা হচ্ছে। শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এটি রোধ করা হলে সমস্ত ব্যাপারী অন্য জেলাতে গিয়ে আম ক্রয় করবে। ফলে এখানকার আম ব্যবসায়ী ও আম চাষীরা খুব জোরে হোঁচট খাবে। তবে এটি নিয়ে জেলা ও আন্তঃজেলা পর্যায়ে আলোচনা করে সমাধান হতে পারে। আমি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন, আম চাষী ও ব্যবসায়ীদেরকে প্রতারণা হাত থেকে রক্ষা করতে আমরা দ্রুত বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে ৪০ কেজিতেই মণ ধরে আম কেনাবেচা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে এ বিষয় নিয়ে সংসদেও কথা বলবো।