মহাস্থান নিউজ:
সারাদেশের মতো ফরিদপুরের বাজারেও কাঁচা মরিচের বাজারে আগুন লেগেছে। শনিবার (১ জুলাই) সকালে শহরের পাইকারি আড়তে ও বিভিন্ন খুচরা বাজারে ঘুরে দেখা যায় অতিরিক্ত দামের সঙ্গে ক্রেতাদের হাঁসফাঁসের চিত্র।
শহরের হাজি শরিয়তুল্লাহ বাজারের আড়তে সকালে ৫৬০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হতে দেখা যায়। এই মরিচই শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকার মধ্যে।
বাজারের আড়তদার তুহিন সিকদার জানান, কয়েকদিন তীব্র দাবদাহের কারণে বেশিরভাগ মরিচ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় মরিচক্ষেতে পানি জমার কারণে মরিচ গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে কাঙ্ক্ষিত মরিচ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। ফলে বাজারে মরিচের সরবরাহ কম। দাম বেশি। আমার আড়তে ৬৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারিভাবে মরিচ বিক্রি করছি।
তিনি আরো জানান, ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার কেষ্টপুরের মরিচ ছাড়া মধুখালী বা অন্য কোথাকার মরিচ এই মুহূর্তে এসে পৌঁছায়নি। তবে কবে নাগাদ এই সমস্যা মিটবে এ ব্যাপারে তারা কিছু বলতে পারেনি।
এদিকে মরিচের অব্যাহত দান বৃদ্ধিতে জনগণ পড়েছে বিপাকে। বিকল্প হিসেবে শুকনা মরিচের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন অনেকে। অনেকেই এক কেজির জায়গায় ১০০ গ্রাম বা ৩০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনছেন।
শহরের হাজী শরিয়তুল্লাহ বাজারে রিকশা চালক মফিজ শেখ বলেন, ‘১০০ গ্রাম মরিচ কিনছি দাম নিলো ৮০ টাকা। রিকশা চালিয়ে এর থেকে বেশি কেনার ক্ষমতা নেই আমার। তবুও খাই নাইলে বাচুম কেমনে। এমন সময় এক ক্রেতা এসে বলেন ভাই ২০ টাকার মরিচ দেন। দোকানি ক্রেতাকে হাতে করে ৬টি মরিচ দিলেন।’
এই বাজারের হোটেল ব্যবসায়ী আলমাস ব্যাপারি বলেন, এক কেজি কাঁচা মরিচ আড়ত থেকে সকালে আনছি ৬৫০ টাকায়। বাজারে আদাসহ সব নিত্যপণ্যের দাম চড়া। অথচ দোকানে তৈরি খাবারের দাম তো বাড়াতে পারছি না। দাম বাড়ালে ক্রেতা আসে না। চারিদিকেই জ্বালা। দেশে বাস করাই এখন জ্বালা।
ফরিদপুর শহরের অম্বিকাপুর কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক কেজি মরিচ নিলে ৭৫০ টাকা দর আর ১০০ গ্রাম নিলে ৮০০ টাকা দর অর্থাৎ ৮০ টাকায় নিতে হবে।
বাজারের কাঁচা ব্যবসায়ী বাবুল বিশ্বাস বলেন, ‘একটা কাঁচা মরিচের দামই ২ টাকা পড়ে যায় এখন। খাবেন ক্যামনে। খাইতে হলে তো বেশি দাম দিয়েই খেতে হবে।’
মধুখালীর মেকচামি ইউনিয়নের বামুন্দি গ্রামের মরিচচাষি উত্তম রায় বলেন, ‘হঠাৎ করে এবার মরিচের দাম বাড়িয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটছে। শনিবার সকালে মধুখালী আড়তে নিয়ে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রতি মণ মরিচ বিক্রি করেছি। কৃষকের হাত ঘুরে কেজিতে কয়েকশো টাকা বেশি দামে পাইকারি বাজারে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মরিচ।’
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা সদরের মরিচ বাজারের আড়তদার মো. আলম বলেন, ‘দফায় দফায় কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে ২০ হাজার টাকা দরে প্রতি মণ মরিচ কিনেছি। সে হিসাবে কেজি পড়ে ৫০০ টাকা। খুচরা বাজারে যেভাবে পারছে বিক্রি করছে।’
বোয়ালমারী বাজারের তরকারি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, দুপুর পর্যন্ত এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি ৮০০ টাকায়।
জেলা ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, মরিচের বিষয়ে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। সারাদেশেই মরিচের বাজারটা হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এই সুযোগে কেউ যেন অতি মুনাফার লোভে দাম বৃদ্ধি বা সিন্ডিকেট করতে না পারে এজন্য আমাদের নিয়মিত মনিটরিং চলমান আছে। সেই সঙ্গে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, এবার ফরিদপুর জেলায় ৩ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। জেলার মধুখালী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ আবাদ হয়েছে।