মহাস্থান নিউজ: দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসবের ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ। পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় দিনটিকে পালন করে থাকে। আর এই দিনটিকে সামনে রেখে বগুড়ার কামারশালায় পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারের কামারশালা গুলো এখন লোহা-হাতুড়ির টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে। কামার শিল্পের কারিগরদের নিখুঁত হাতুড়ির আঘাতে তৈরি হচ্ছে দা, বটি, চাকু, কুড়াল, ছুরি, চাপাতিসহ ধারালো সব পশু কাটার যন্ত্রপাতি। কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যস্ত সময় পাড় করছে কামারশালার কারিগররা।
গতকাল সোমবার (২৬ জুন) দুপুরে শহরের বাদুরতলা এলাকার কামারশালা ঘুরে দেখা যায়, সারা বছর কাজ সীমিত থাকলেও কোরবানির ঈদের এ সময়টাতে বেড়ে যায় কামারদের কর্মব্যস্ততা। ঈদকে ঘিরে আশার আলো দেখছেন কামাররা। নাওয়া-খাওয়া ভুলে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের চাপাতি, ছুরি, বটি ও চাকু তৈরিতে তারা। যতই ঈদের দিন ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। কামার শিল্পীরা বলেন, প্রতিটি কাটারি বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। দা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ছোট ছুরি ১২০ থেকে ২৫০ টাকা। বড় ছুরি ১৬০০ থেকে ২০০০ টাকা, বঁটি প্রতি পিস ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। তারা আরও বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর কুরবানির ঈদ উপলক্ষে কয়লার দাম ও শ্রমিকের দাম বেড়ে গেছে।
তবে, ক্রেতাদের দাবি, ঈদ উপলক্ষে দা, চাপাতি ও ছুরির দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। পশু জবাই করার বড় ছুরি ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। চাপাতির দাম রাখা হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। বগুড়া শহরের বাদুরতলা এলাকার কামার শিল্পী দুলাল চন্দ্র কর্মকার জানান, ঈদ ঘনিয়ে আসায় চাপ বেশি থাকায় রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। নতুন সরঞ্জামের চাহিদার পাশাপাশি পুরাতন সরঞ্জাম শান দেওয়া হচ্ছে। তবে এ বছর বেশির ভাগ ক্রেতা পুরাতন সরঞ্জাম মেরামত করতে নিয়ে আসছেন। খুব বেশি বিক্রি হচ্ছে না, ঈদের এক-দুই দিন আগে বিক্রি বাড়বে। রায়হান তালুকদার নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের আর কয়েকদিন বাকি। তাই আগে থেকেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জামের নতুন ছুরি কিনে রাখছি। অপর ক্রেতা মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কেনার পাশাপাশি পুরাতন বটি, চাপাতি, ছুরিতেও শান দিতে নিয়ে এসেছি। এদিকে পশু জবাই, চামড়া ছাড়ানো এবং মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত দা, ছুরি, চাপাতি, বটি ইত্যাদি সরঞ্জাম কেনার হিড়িক পড়েছে বগুড়া শহরের বিভিন্ন স্থানে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শহরের ১, ২,ও ৩ নম্বর ঘুমটি, কাঁঠালতলা, ভাংড়িপট্টি, চেলোপাড়া, কলোনিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অস্থায়ী দোকান বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে কোরবানি পশু জবাইয়ের এসব সরঞ্জাম। শহরের দা-ছুরি বিক্রেতা ছাব্বির শেখ জানান, অন্যবার কোরবানির অন্তত ১০ দিন আগে থেকে কম করে হলেও চাপাতি, দা, ছুরি এবং বঁটি বিক্রি হওয়া শুরু হয়ে যায়। তবে এবার মালামাল হাউসফুল হলেও বিক্রি কম। পশু জবাইয়ের ছুরি ও হাড় কাটার দা কম বেশি অনেকের ঘরেই যত্ন করে রাখা আছে। তারপরও এগুলোর চাহিদা ব্যাপক। দেখা যাক, সামনে কেমন বেচাকেনা হয়। দাম জানতে চাইলে ছুরি বিক্রেতা ছাব্বির শেখ জানান ঈদ উপলক্ষে লৌহজাত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি প্রতি পিস ১০০ থেকে ২০০ টাকা, দা ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা, বটি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা বড়ু ছুরি ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, চাপাতি ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ছুরি কিনতে আসা আকবর হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, ঈদের আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। একটু আগেই পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম কিনতে এসেছি। তবে গত বছরে এসব জিনিসের তুলনামূলক যে দাম ছিল, তার চেয়ে এবার দাম খানিকটা বেশিই।।